editorial

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত থাকবে

সময়: মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০ ২:১১:৫৪ অপরাহ্ণ


বাংলাদেশ-বৃটেন দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ হিসেবে বৃটেন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক মুক্ত জিএসপি(জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) সুবিধা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা লাভ করে থাকে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আমদানিকারকদের বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুল্ক প্রদান করতে হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগি অন্যান্য দেশের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে একক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশি হচ্ছে সবচেয়ে বড় ক্রেতা বা আমদানিকারক। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অস্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর সংশয় দেখা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের নিকট থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অগ্রাধিকারমূলক যে সুবিধা পেতো তা কি অব্যাহত থাকবে নাকি তারা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববে? উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা। কাজেই তারা যদি কোনো কারণে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিশেষ করে বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বিষয়টি খোলসা করেছেন। তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন,বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ আগে যে বাণিজ্য সুবিধা পেতো তা অব্যাহত থাকবে। তিনি এমন সময় এই আশ্বাসবাণী শোনালেন যকন আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কিছুটা হলেও জটিলতার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে। এটি একটি রেকর্ড কিন্তু চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেকটাই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত ৫বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের অনিবার্য প্রভাবে বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিয়েছে তারই প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গন্তব্যগুলো ধরে রাখাটা খুবই জরুরি। এ ছাড়া নতুন নতুন বাণিজ্য অঞ্চল খুঁজে বের করতে হবে। এই অবস্থায় যুক্তরাজ্যের মতো একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি গন্তব্য হাত ছাড়া হয়ে গেলে বেশ সমস্যাই হতো। কিন্তু যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের এই আশ্বাসবাণী আমাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেড়িয়ে গেলেও দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে না।

ব্যাংকগুলোতে ইন-সাইড লেন্ডিং কাম্য নয়
বিষয়টি অনেক দিন ধরেই নানাভাবে আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু কেউই সঠিকভাবে পরিসংখ্যান উল্লেখ করতে পারছিলেন না। অবশেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে ইন-সাইড লেন্ডিং এর ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম (টিটু)’র এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন,দেশের ব্যাংক পরিচালকদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকের পরিচালকগণ নিজেদের ব্যাংক এবং অন্য ব্যাংক থেকে এই পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে পরিচালকগণ নিজেদের ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর অন্য ব্যাংক থেকে তারা যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। নিজ ব্যাংক এবং অন্য ব্যাংক থেকে পরিচালকগণ যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টরের মোট ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতহাংশ। আর নিজ ব্যাংক থেকে তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ছাড়কৃত মোট ঋণের শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। নিজ ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করেছেন এবি ব্যাংকের পরিচালকদের। এর পরিমাণ হচ্ছে ৯০৭ কোটি ৪৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অনেক দিন ধরেই অভিযোগ শোন যাচ্ছিল যে, এক শ্রেণির ব্যাংক পরিচালক নানাভাবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণ করছেন। এমন কি তারা পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ গ্রহণ করছেন। গৃহীত ঋণের বেশির ভাগই পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে আদায় করা সম্ভব হয় না। এতে ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রম মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়। সংশ্লিষ্ট সবাই জানতেন ব্যাংকের পরিচালকগণ নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের গৃহীত ঋণের অংক যে একটা বিশাল তা অনেকেরই জানা ছিল না। অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ না করলে বিষয়টি সবার আড়ালেই থেকে যেতো।
ব্যাংক পরিচাকগণ যদি নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন বা অন্য ব্যাংক থেকে তার প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে নেন তাহলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমত,তারা ইচ্ছে করলেই নিজেদের প্রভাব বিস্তাব করে আইনকে তোয়াক্কা করে নিজ নামে অর্থবা আত্মীয়-স্বজনের নামে ঋণ বরাদ্দ করিয়ে নিতে পারেন। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক নিয়ম-নীতি উপেক্ষিত হয়। এটা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। পরিচালকগণ অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাদের প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। অথবা পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এই ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। পরিচালকগণ নিজ ব্যাংক অথবা অন্য ব্যাংক থেকে এভাবে ঋণ গ্রহণ করলে ভালো এবং উপযুক্ত ঋণ আবেদনকারীরা ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এতে ঋণের অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভুতকরণ হয়। ব্যাংকের ঋণদান সক্ষমতা হ্রাস পায়। যেহেতু পরিচালকগণ অত্যন্ত প্রভাবশালী তাই তারা যদি নিজ ইচ্ছেয় ঋণের কিস্তি ফেরৎ না দেন তাহলে তাদের নিকট থেকে কোনোভাবেই বকেয়া ঋণ আদায় করা সম্ভব হয় না। এটা খেলাপি ঋণ কালচারকে আরো প্রলম্বিত করে। প্রয়োজনে নতুন আইনে করে হলেও ব্যাংক পরিচালকদের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নিজ ব্যাংক অথবা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাত্রা সীমিতকরণ করা যেতে পারে। একজন পরিচালক যদি তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে চান তাহলে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব ত্যাগ করে তা নিতে পারেন।

Share
নিউজটি ৩১০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged