সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন

স্থিতিশীল তহবিলের ঋণে বড় প্রভাব পড়বে না শেয়ারবাজারে

সময়: মঙ্গলবার, এপ্রিল ১১, ২০২৩ ৬:২৮:৫৪ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীদের অদাবিকৃত বা অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের অর্থ শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে ঋণ হিসেবে ব্যবহার হবে । তারল্য বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের অদাবিকৃত ডিভিডেন্ডের অর্থে গঠিত শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল (সিএমএসএফ) থেকে এ ঋণসহায়তা দেওয়া হবে। সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, শেয়ারবাজার স্থিতিশীল তহবিল থেকে শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে তারল্য জোগান দেওয়া যাবে। কয়েক শ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলে তাতে বাজারে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। এর আগেও তহবিলটি থেকে বিনিয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রভাব আমরা দেখিনি বলে জানিয়েছে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন বা প্রান্তিক ঋণ দিতে এ তারল্য জোগান দেওয়া যাবে। বিনিয়োগকারীদের মার্জিন সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের পোর্টফোলিওর মাধ্যমেও বিনিয়োগ করতে পারবে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণের সমপরিমাণ অর্থ নিজেদেরও বিনিয়োগ করতে হবে।

বিএসইসি বলছে, সিএমএসএফ থেকে দেওয়া ঋণের সুদ ব্যাংকের মেয়াদি আমানত বা এফডিআরের তিন মাসের গড় সুদের কম হতে পারবে না। তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন বা ছয় মাস। তবে মেয়াদ নবায়নের সুযোগ থাকবে।

শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিএমএসএফ থেকে ঋণ দেওয়ার এ উদ্যোগের খুব বেশি সুফল মিলবে বলে মনে হয় না। কারণ হিসেবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, বর্তমানে ব্যাংক থেকে ৭-৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে তা তাঁরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারছেন। কিন্তু সিএমএসএফ তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদকে বলা হচ্ছে সর্বোচ্চ মেয়াদি ঋণের তিন মাসের গড় হারকে। বর্তমানে অনেক ব্যাংক ৮ শতাংশ সুদেও মেয়াদি আমানত নিচ্ছে। সেটিকে যদি সর্বোচ্চ সুদ বিবেচনায় নিয়ে সুদহার নির্ধারণ করা হয়, তাহলে কোনো ব্রোকারেজ হাউস ঋণ নিতে আগ্রহী হবে না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ উদ্যোগ বাজারে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ তহবিলের আকার কয়েক শ কোটি টাকার। এ টাকা থেকে ঋণ দিয়ে বাজারকে গতিশীল করা খুব কঠিন। ইতিমধ্যে তহবিলটি থেকে দুই শ কোটি টাকার বেশি বাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তাতে বাজার পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।

বিএসইসির নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে একসঙ্গে ২০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। আবার একসঙ্গে ৫ কোটি টাকার কম ঋণও দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া যেসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সমন্বিত গ্রাহক হিসেবে ঘাটতি রয়েছে এবং গত পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো ধরনের শাস্তি পেয়েছে, সেসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক তহবিল থেকে তারল্য সুবিধা পাবে না।

সিএমএসএফ গঠিত হয় ২০২১ সালে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ডিভিডেন্ড বাবদ বিনিয়োগকারীদের অদাবিকৃত অর্থে এ তহবিল গঠন করা হয়। তহবিলের অর্থ বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে এ-সংক্রান্ত আইনে। এরই মধ্যে তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি মিউচুয়াল ফান্ড।

সিএমএসএফ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তহবিলে বর্তমানে সব মিলিয়ে নগদ অর্থ রয়েছে ৫১০ কোটি টাকা। আর ৬৫০ কোটি টাকার সমমূল্যের বোনাস বা স্টক ডিভিডেন্ড রয়েছে। এসব ক্যাশ অর্থ ও স্টক শেয়ার তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবিতরণকৃত ডিভিডেন্ড থেকে তহবিলে জমা হয়েছে।

Share
নিউজটি ১৬৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged