নাজমুল ইসলাম ফারুক : দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দাভাব বিরাজ করায় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে নেমে গেছে। এসব কোম্পনির শেয়ার দর কমার সঙ্গে সঙ্গে বাজার মূলধনও বেশ কমেছে। তবে এ মন্দা পরিস্থিতিতেও শেয়ার দর ওঠা-নামায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল আচরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় মোট বাজার মূলধনের প্রায় ৯ শতাংশই ১৯ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির দখলে।
মৌলভিত্তিসম্পন্ন হওয়ায় কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন গত ছয় মাস ধরে স্বাভাবিক রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোম্পানিগুলোর ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকায় মন্দা পরিস্থিতি বাজার মূলধনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে সরকারি আরও কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘নজরদারির অভাবে সরকারি কিছু কোম্পানি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দুয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর অনেক বেশি ওঠা-নামা করেছে। সেগুলোতে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে অধিকাংশ কোম্পানি ভালো অবস্থানে আছে। সেগুলোর উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজারে অস্থিরতা অনেকটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাবে, যা দীর্ঘমেয়াদি বাজার স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে।’
একই বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংলাদেশের সভাপতি শাকিল রিজভী ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ সরকারি কোম্পানিগুলো মৌলভিত্তি সম্পন্ন। মন্দা পরিস্থিতিতেও কোম্পানিগুলোর শেয়ারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ কোম্পানিগুলোর ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে।’
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, দেশের পুঁজিবাজারে মোট ১৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। এসব কোম্পানির বাজার মূলধনের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৯ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, যা মোট বাজার মূলধনের ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাজার মূলধনে সেরা অবস্থানে আছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইসিবি)। চলতি বছরের গত ছয় মাস ধরে কোম্পানিটি এ অবস্থান ধরে রেখেছে। গত জুন শেষে আইসিবি’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৬ কোটি ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা, যা সরকারি কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধনের ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বাজার মূলধনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তিতাস গ্যাস। যা সরকারি কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধনের ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৩৭ কোটি ১০ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানিটির বাজার মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১০ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। যা সরকারি কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধনের দশমিক ৭৯ শতাংশ।
মোট বাজার মূলধনে সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ দখল করে রাখা সরকারি অন্যান্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন ক্যাবলস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, যমুনা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্টোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস, জিল বাংলা সুগার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোম্পানির শেয়ার দর ওঠানামার সঙ্গে বাজার মূলধন বাড়ে-কমে। দীর্ঘ মন্দা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের সঙ্গে বাজার মূলধনও ওঠানামা করেছে। কিন্তু সরকারি কোম্পানির শেয়ারের পাশাপাশি বাজার মূলধন ওঠানামার হার ছিল স্বাভাবিক। আর এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারনের হারও অনেক বেশি। তাই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পায়। এ কারণে এসব কোম্পানিকে আস্থার প্রতীক বলা হয়। তবে ১৯টির মধ্যে কিছু কোম্পানির লোকসানের বোঝা অনেক বেড়েছে। সেগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেছেন না। তবে সরকারি বেশির ভাগ কোম্পানির উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা আছে বলে তাদের বাজার মূলধন স্বাভাবিক অবস্থানে রয়েছে। তবে সরকারি আরও কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান
।