আইপিও’র অর্থের অপব্যবহার

ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ঋণ পরিশোধ করছে না আমান কটন

সময়: মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০১৯ ৯:২৩:৪৫ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘আমান কটন অ্যান্ড ফাইবার্স লিমিটেড’ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্টো আইপিও অর্থ এফডিআর করে তা জামানত হিসেবে অন্য কোম্পানির ঋণ গ্রহণে ব্যবহার করা হয়েছে। কোম্পানিটির ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিয়ন ক্যাপিটাল’ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি) সহ উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে বিষয়টি অভিযোগ আকারে দাখিল করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, কোম্পানিটির ১০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের রমনা শাখায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৫ টাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটালের প্রধান শাখায় ৮ কোটি ৪৭ হাজার ২২৫ টাকা। তবে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল অভিযোগ করেছে, আমান কটন থেকে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৪ টাকা তারা পেয়েছে। বাকি টাকা কোম্পানিটি পরিশোধ করছে না বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইউনিয়ন ক্যাপিটাল বিশ্বাস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে আইপিওর টাকা এফডিআর করা হয়েছে। আবার ওই এফডিআরকে জামানত রেখে আমান গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল সূত্রে জানা যায়, আইপিওর টাকা থেকে ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি টাকা দিতে গড়িমশি করছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি রেগুলেটরসহ স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে।
ঋণ পরিশোধ না করার কারণ জানতে চেয়ে আমান কটনের কোম্পানি সচিব মো. মনিরুল ইসলামকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইপিও অর্থ ব্যবহার করতে ব্যর্থ কোম্পানি আমান কটন পুঁজিবাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। তবে আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি উত্তোলিত অর্থের ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ ব্যবহারে সক্ষম হয়। গত ৫ আগস্ট কোম্পানিটির আইপিও অর্থ ব্যবহারের সময়সীমা শেষ হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানিটি আইপিও অর্থের মোট ৮ কোটি ৩০ হাজার ৫৮ টাকা খরচ করেছে। এখনও ৭১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪২ টাকা ব্যবহার বাকি রয়েছে।
কোম্পানিটি তার আইপিও বাবদ খরচের বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার ২৮ টাকা পরিশোধ করেছে। আর যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণ এবং স্থাপন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে কোনো অর্থই খরচ করতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এদিকে কোম্পানির ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আলোচ্য সময়ে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা ১৯ হাজার ৩০ টাকা ঋণ পরিশোধ হয়েছে। এখনও ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার ৯৭০ টাকা ঋণ পরিশোধ করা বাকি রয়েছে কোম্পানিটির। কোম্পানির আইপিও তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত সুদ বাবদ আয় এসেছে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৮ টাকা। এখন আইপিও এবং সুদ মিলে কোম্পানির কাছে মোট ৭১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪২ টাকা রয়েছে।
গত ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৬১১তম কমিশন সভায় আমান কটন অ্যান্ড ফোইবার্সকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। উত্তোলিত অর্থ গ্রহণ করার সময় থেকে ১২ মাসের মধ্যে ব্যবহার করার কথা ছিল।
এদিকে, কোম্পানিটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ২৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। স্বল্প মেয়াদে ঋণ রয়েছে ৯০ কোটি ৩৮ লাখ ২০ টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদে ঋণ রয়েছে ৫ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার হাজার টাকা। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ৬ দশমিক ৫২ পয়েন্ট, ডায়লোটেড ইপিএস অনুয়ায়ী পিই রেশিও ৯ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ৮ দশমিক ২৪ পয়েন্ট।
গত ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করে। এসময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ২ টাকা ১১ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৪২ টাকা ৭৬ পয়সায়। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪০২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged