ইসলামী জীবন বীমা ব্যবসায় পৃথক হবে তাকাফুল ফান্ড

সময়: সোমবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯ ১০:৩৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : কোন জীবন বীমা কোম্পানি প্রথাগত ব্যবসার পাশাপাশি ইসলামী ব্যবসা করতে চাইলে তাকে ব্যালেন্স শিটে রিস্ক ফান্ড ও তাকাফুল ফান্ড পৃথক করে দেখতে হবে। ফান্ড দু’টির ভ্যালুয়েশনও হবে আলাদাভাবে। এমন বিধি রেখে ইসলামী বীমা ব্যবসার জন্য একটি প্রবিধানমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ইস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। সম্প্রতি নতুন এ প্রবিধানমালার বিষয়ে সেন্ট্রাল শরিয়াহ্্ কাউন্সিল ফর ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স অব বাংলাদেশের কাছে মতামত চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এর আগে প্রবিধানমালাটি তৈরির জন্য চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয় আইডিআরএ। কমিটির চেয়ারম্যান হলেন সোহরাব উদ্দীন, অ্যাকচুয়ারি। অন্যদের মধ্যে রয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও মেটলাইফ বাংলাদেশের মনোনীত প্রতিনিধিরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের তাকাফুল অ্যাক্টের আদলেই ইসলামী বীমা ব্যবসার এ প্রবিধানমালা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সেন্ট্রাল শরিয়াহ্্ কাউন্সিল ফর ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাসুম বিল্লাহ দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রবিধানমালাটি তৈরি করা হচ্ছে। আইডিআরএ আমাদের মতামত চেয়েছে। আমরা শিগগিরই তা জানাবো।
আইডিআরএ বলছে, বর্তমানে দেশে ইসলামী বীমা ব্যবসা নেই। যা হচ্ছে তা হলো ইসলামের নামে প্রথাগত ব্যবসা। প্রকৃত অর্থে ইসলামী বীমা ব্যবসায় গ্রাহক ও মালিকের অংশগ্রহণ সমান। এতে গ্রাহকরা কখনই তাদের সঞ্চয় থেকে বঞ্চিত হন না।
খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, প্রথাগত বীমা ব্যবসা ও ইসলামী বীমা ব্যবসার হিসাবও নির্ধারিত ফরমে পৃথকভাবে দেখাতে হবে। একই সঙ্গে কোম্পানির বিনিয়োগও দেখাতে হবে পৃথকভাবে। প্রতিটি ইসলামী বীমা কোম্পানিতে বাধ্যতামূলকভাবে শরিয়াহ্ বোর্ড চালুর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে খসড়া প্রবিধানমালায়।
আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা ইসলামী বীমা ব্যবসাকে পৃথক করার চেষ্টা করছি। আমাদের বক্তব্য হলো কোনো কোম্পানি যদি ইসলামী বীমা ব্যবসা করে, তাহলে তাকে শতভাগ শরিয়াহ্্ আইন মেনেই তা করতে হবে।

বীমা আইনে প্রথাগত ও ইসলামী বীমা ব্যবসা একই সঙ্গে করার ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর বাধা রয়েছে। কিন্তু জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কি হবে তা বলা হয়নি।
বীমা আইনে ২০১০ এর ৭ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট ১৯৩৮-এর অধীন নিবন্ধিত যেসব বীমা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনা করত, সেসব কোম্পানি ও ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে আইডিআরএ-এর কাছে যেকোনো শ্রেণির বা উপশ্রেণির বীমা ব্যবসা করার অনুমতি নিয়ে তা করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যেকোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি একই সঙ্গে প্রচলিত নন-লাইফ বীমা ব্যবসা ও ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।
আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লা বলেন, প্রথাগত ও ইসলামী বীমা ব্যবসা পৃথকভাবেই পরিচালনা করা উচিত। তবে আইনে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য নেই। তাই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যদি প্রথাগত ও ইসলামী ব্যবসা আলাদা করতে চায় তাহলে তাদের আইন সংশোধন বা সংযোজনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

বর্তমানে দেশে মোট ১২টি ইসলামী বীমা কোম্পানি ব্যবসা করছে। এর মধ্যে জীবন বীমা ৯টি ও সাধারণ বীমা কোম্পানি ৩টি। ইসলামী জীবন বীমা কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, পপুলার ইসলামী লাইফ, জেনিথ ইসলামী লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, আলফা ইসলামী লাইফ ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, ইসলামী সাধারণ বীমা কেম্পানিগুলো হলো- ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ও ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া নন-ইসলামিক কোম্পানিগুলোও আলাদা উইং খুলে ইসলামী বীমা ব্যবসা করে আসছে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৮১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged