সাইফুল শুভ : ব্যাংকের তুলনায় উচ্চসুদে ঋণ নিয়েও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে না লিজিং কোম্পানির গ্রাহকরা। ব্যাংকের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন লিজিং কোম্পানির গ্রাহকরাও এ সুবিধা পাবার প্রত্যাশায় আবেদন করেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা না থাকার কারণে লিজিং কোম্পানির গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছে।
লিজিং কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের চেয়ে অস্থির সময় অতিক্রম করছে নন-ব্যাংকিং খাতের লিজিং কোম্পানিগুলো। এ সময় পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া হলে তারল্য সঙ্কট অন্তত কিছুটা কমতো। একইসঙ্গে তাদের খেলাপি ঋণের মাত্রাও কমে আসতো।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, লিজিং কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ধরণ একটু ভিন্ন রকমের। তাই ব্যাংকের মতো সব সুবিধা তাদের দেয়া হয় না। যেমন, তারা ব্যাংকের মতো ব্যক্তিগত বা কোম্পানির হিসাব বা অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি পায় না। লিজিং কোম্পানিগুলো আমানত রাখলেও এটি নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক রয়েছে।
অন্যদিকে গত ২ ডিসেম্বর ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা কেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও এ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ঋণ গ্রহীতা মো. ইউনুস পাটওয়ারীর করা এ-সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে. বি. এম. হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায় ও আইনজীবী রাজু হাওলাদার পলাশ।
এ বিষয়ে রিটের পক্ষের অন্যতম আইনজীবী রাজু হাওলাদার পলাশ দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকিং খাতের চেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে লিজিং খাতে। এছাড়া ব্যাংকের গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছেন ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ সুদে। আর লিজিং কোম্পানির গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছেন ২০ থেকে ২২ শতাংশ সুদে। ব্যবসার পরিস্থিতি সব ব্যবসায়ির জন্যই খারাপ যাচ্ছে। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের আবেদন আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার না থাকায় তারা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাই রিট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইডিএলসি ফাইনান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফ খান দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, এটি সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত। তারা যদি মনে করে লিজিং কোম্পানির গ্রাহকদের জন্যও এ সুবিধা দেয়া উচিত তাহলে দিতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কেউ এ সুযোগের অপব্যবহার করতে না পারে। সব গ্রাহককে ঢালাওভাবে এ সুযোগ দেয়া যাবে না। অনেক গ্রাহক আছেন যারা ইচ্ছে করেই ঋণের টাকা ফেরত দিতে চায় না। তাদের জন্য এ ধরনের সুযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানই জানে তার কোন গ্রাহক কেমন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। যদিও বিআরপিডি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রুলের কোনো চিঠি আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। চিঠি এলে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে রিটের পক্ষের আইনজীবী জানান, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ঋণ গ্রহীতা মো. ইউনুস পাটওয়ারী প্রথমে ফিনিক্স ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সুবিধা পেতে আবেদন করেন। তবে তাকে জানানো হয়, এ সুবিধা শুধু ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের জন্য প্রযোজ্য। এরপর ইউনুস পাটওয়ারীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। সে নোটিশের জবাব না পেয়ে শুধু ব্যাংক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২ ডিসেম্বর রুল জারি করেন।
উল্লেখ্য, এ বছর ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ সার্কুলার জারি করে। এতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছর ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচিত এই সার্কুলারের বিষয়টি একসময় উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরে দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধসাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করে তার মেয়াদ ৯০ দিন বাড়িয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে এসব ঋণখেলাপিকে নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১২ সালের মাস্টার সার্কুলার অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবি’র এই রিট আবেদন করেছিল।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান