বিশেষ প্রতিনিধি : চলতি অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ গত জুন শেষে ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৫৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে ছয় ব্যাংককে তাদের খেলাপি ঋণের স্থিতি ১৩ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা কমিয়ে আনতে হবে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’র আওতায় এ পরিমাণ খেলাপি ঋণের স্থিতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
জানা যায়, সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল)। একমাত্র সোনালী ব্যাংক ছাড়া বাকীগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ‘চলতি মানের নিচে’ তথা সন্তোষজনক নয়। উল্লেখ্য, গত অর্থবছর শেষে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মোট স্থিতি হচ্ছে ৫৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে (জুন ২০২০) সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে শতকরা হিসেবে ব্যাংকটিতে তখন খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ২৪ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ১২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা (২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ)। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক-কে মোট ৪৭৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে।
চলতি অর্থবছর শেষে জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে শতকরা হিসেবে ব্যাংকটিতে তখন খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরে জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ২১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা (৪০ শতাংশ)। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে জনতা ব্যাংককে মোট ১১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে।
চলতি অর্থবছর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে শতকরা হিসেবে ব্যাংকটিতে তখন খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা (১৭ শতাংশ)। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংককে মোট ১৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে।
চলতি অর্থবছর শেষে রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে শতকরা হিসেবে ব্যাংকটিতে তখন খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা (১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ)। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে রূপালী ব্যাংককে মোট ৬৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে।
চলতি অর্থবছর শেষে বেসিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে শতকরা হিসেবে ব্যাংকটিতে তখন খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। গত অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৮ হাজার ৮০৪ কোটি ১২ লাখ টাকা (৫৭ দশমিক ৪১ শতাংশ)। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে বেসিক ব্যাংককে মোট ৬০৪ কোটি ১২ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে।
চলতি অর্থবছর শেষে বিডিবিএল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে শতকরা হিসেবে ব্যাংকটিতে তখন খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ৪০ শতাংশ। গত অর্থবছরে বিডিবিএল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০০ কোটি টাকা। পূর্বে প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এর বিপরীতে গত জুন (২০১৯) শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৯০১ কোটি টাকা (৪৬ শতাংশ)। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে বিডিবিএল ব্যাংককে মোট ২০১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান