তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : জুলাই মাসে ব্যাংক খাতের শেয়ারধারণ ব্যাপক হারে কমিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। জুন মাসের তুলনায় জুলাইতে ব্যংক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ কমেছে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাইতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ কিনেছেন তার তুলনায় বিক্রি বেশি করেছেন প্রায় ২২৫ কোটি ৭৯ লাখ শেয়ার। অথচ জুন মাসে ছিল উল্টো চিত্র। ওই মাসটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৩ কোটি ৪১ লাখ শেয়ার বেশি কিনেছিলেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে ব্যাংক খাতের শেয়ারধারণ সংক্রান্ত উপাত্ত বিশ্লেষণে এসব তথ্য মিলেছে।
এদিকে জুন মাসের ধারাবাহিকতায় শেয়ারধারণ বাড়িয়ে চলেছেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। জুন মাসের তুলনায় জুলাইতে ব্যংক খাতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ২০৮ কোটি ৫২ লাখ। উদ্যোক্তা পরিচালকরা জুন মাসে মে মাসের তুলনায় শেয়ারধারণ বাড়িয়েছিলেন ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ ওই মাসেও তারা বিক্রয়ের তুলনায় ক্রয় বেশি করেছিলেন ২৪৪ কোটি ৫৮ লাখ শেয়ার। তবে জুন মাসে কয়েকটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ারধারণ বাড়ালেও জুলাইতে মূলত দুটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণে বড় পরিবর্তন হয়েছে। জুলাইতে ডাচ্্-বাংলা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ শেয়ারধারণ বাড়িয়েছেন। আর এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৭ দশমিক ২২ শতাংশ শেয়ারধারণ কমিয়েছেন। এই দুটি ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের প্রভাবেই মূলত ব্যাংক খাতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণে বড় পরিবর্তন হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য ২৮টি ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ জুলাইতে অনেকটা অপরিবর্তিতই ছিল।
এদিকে জুন মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক হারে ব্যাংক খাতের শেয়ার ছেড়ে দিলেও জুলাইতে পরিস্থিতি পাল্টেছে। মাসটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারধারণ বাড়িয়েছেন ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে প্রায় ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ শেয়ার। অথচ জুন মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয় করেছিলেন তার তুলনায় প্রায় ২৫৮ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার বেশি বিক্রয় করেছিলেন। ওই মাসটিতে তারা শেয়ারধারণ কমিয়েছিলেন ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ।
অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি জুলাইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও শেয়ারধারণ কমেছে। জুন মাসের তুলনায় জুলাইতে ব্যংক খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ কমেছে দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ২০ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার। অথচ জুন মাসে মে মাসের তুলনায় ৩২ কোটি ৩৬ লাখ শেয়ার বেশি কিনেছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
ব্যাংকভিত্তিক শেয়ারধারণের চিত্র
এবি ব্যাংক : জুলাইতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ কমেছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। এসময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ১৪ শতাংশ।
আল আরাফাহ : জুলাইতে ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়া : জুলাইতে ব্যাংকটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বেড়েছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংক : জুলাই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
সিটি ব্যাংক : জুলাইতে ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ১৭ ভাগ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ১৬ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংক : জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
ডাচ্্-বাংলা ব্যাংক : এই ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। জুলাইতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডাচ্্-বাংলা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ারধারণ বাড়িয়েছেন। এ সময় ব্যাংকটির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ছেড়ে দেয়া শেয়ারের প্রায় পুরোটাই কিনে নিয়েছেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে সাধারণ বিনিয়োগও কমেছে দশমিক ৩২ শতাংশ।
ইস্টার্ন ব্যাংক : জুলাইতে ব্যাংকটির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ১৯ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে একই পরিমাণে।
এক্সিম ব্যাংক : আলোচ্য মাসে ব্যাংকটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ কমেছে দশমিক ২৯ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ২৮ শতাংশ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক : মাসটিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ১৩ শতাংশ।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংক : ব্যাংকটিতে জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ২৩ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ২৫ শতাংশ।
আইএফআইসি ব্যাংক : জুলাইতে আইএফআইসি ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৭১ শতংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ৬৩ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংক : জুলাই মাসে ইসলামী ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ সময় একই হারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ বেড়েছে।
যমুনা ব্যাংক : ব্যাংকটিতে জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এসময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক : জুলাইতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ কমেছে দশমিক ৪৪ শতাংশ। এসময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ১২ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক: ব্যাংকটিতে জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। এসময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ একই হারে বেড়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক : জুলাই মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এসময় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ১৪ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ১০ শতাংশ।
এনসিসি ব্যাংক : ব্যাংকটিতে জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশএসময় বিদেশি বিনিয়েগ কমেছে দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এসময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
ওয়ান ব্যাংক : ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
প্রিমিয়ার ব্যাংক: জুলাই মাসে ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৪৫ শতাংশ। এসময় একই হারে সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে।
প্রাইম ব্যাংক : জুলাইতে প্রাইম ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৩২ শতাংশ। এসময় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ২৯ শতাংশ।
পূবালী ব্যাংক : ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এসময় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
রূপালী ব্যাংক : তালিকাভুক্ত একমাত্র সরকারি ব্যাংক রূপালীতে জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ৮৩ শতাংশ। এসময় একই হারে সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক : ব্যাংকটিতে আলোচ্য মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ১৪ শতাংশ। একই হারে সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে।
স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক : জুলাই মাসে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ কমেছে দশমিক ১১ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এসময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ২০ শতাংশ।
সাউথইস্ট ব্যাংক : জুলাইতে সাউথইস্ট ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এসময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
স্টান্ডার্ড ব্যাংক : জুলাই মাসে স্টান্ডার্ড ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ বেড়েছে ২ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৬৬ শতাংশ। এসময় ব্যাংকটিতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে ২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
ট্রাস্ট ব্যাংক : ব্যাংকটিতে জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ৪০ শতাংশ।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক : জুলাইতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এসময় ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে দশিমিক ১৬ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংক : ব্যাংকটিতে জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এসময় সাধারণ বিনিয়োগ কমেছে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ###
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান