পর্ব-১

আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ারে ঝুঁকি বাড়ছে

সময়: রবিবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯ ১০:৫৫:৪২ পূর্বাহ্ণ


সাইফুল শুভ : ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার। কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান সম্পদমূল্য ও আয়ের সঙ্গে বাজার দরের সামঞ্জস্য নেই। তারপরও বেশি দরে শেয়ারটি স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, অতি মূল্যায়িত হয়ে পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। ইপিএস, এনএভি ও পিই রেশিও বিবেচনায় শেয়ারের দর অনেক বেশি।
কোম্পানির বিগত ৯ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারের সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৩১ পয়সা। এর বিপরীতে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার ৮৪ টাকা ২০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। এদিন মোট ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪৬টি শেয়ার ৭৮৮ বারে লেনদেন হয়। গত এক বছরের কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর যথাক্রমে ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা ও ৯২ টাকা ৭০ পয়সা।
আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের বিগত ৫ বছরের এনএভি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এনএভি কখনোই ১০ টাকার ঊর্ধ্বে ওঠেনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির এনভি ২০১৪ সালে ছিল ৮ টাকা ১১ পয়সা, ২০১৫ সালে ছিল ৮ টাকা ২৮ পয়সা, ২০১৬ সালে ছিল ৮ টাকা ৪২ পয়সা, ২০১৭ সালে ছিল ৮ টাকা ৯২ পয়সা এবং ২০১৮ সালে এনএভি ছিল ৯ টাকা ৩৪ পয়সা।

শেয়ার দরের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের কোম্পানি সচিব তাওহিদুল ইসলাম ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য অপ্রকাশিত নেই। যখনই কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আসে, সঙ্গে সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জ ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়। আর শেয়ারের দর কী হবে Ñসেটি বাজারই ঠিক করে। এখানে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা থাকে না। বিনিয়োগকারীরা কেন কিনছে Ñসেটা তারাই বলতে পারবে।’

ইতোপূর্বে গত ৯ জুন কোম্পানির এক মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে জানানো হয়েছিল যে, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্রেক ড্রাম তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। ব্রেক ড্রামের জায়গায় তারা জিআই ফিটিংস উৎপাদন বাড়াবে। বাজার চাহিদা ও বিপণন ব্যয় বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা আগের চেয়ে কী পরিমাণ জিআই ফিটিংস উৎপাদন বাড়াবে তা উল্লেখ করেনি। এমনকি বাজারে এর কী পরিমাণ চাহিদা আছে সেটিও জানায়নি। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘কী পরিমাণ জিআই ফিটিংস বিক্রির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তাই এটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে প্রকাশ করা হয়নি। এজন্য যে বাজার যাচাই-বাছাই করে পর্যালোচনা প্রতিবেদন (ফিজিবিলিটি রিপোর্ট) করা নেই। তাই আপাতত শুধু এটুকুই জানানো হয়েছে।’
এদিকে কোম্পানির আয়েও মন্দাভাব চলছে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (মার্চ ২০১৯) কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৯৬ পয়সা। সে হিসেবে আয়ে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় হয়েছে ২৯ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয় হয়েছে মাত্র ১১ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫৬ পয়সা। সব মিলিয়ে ৯৭ পয়সা।
২০১৮ সালে নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইপিএস ছিল ১ টাকা ২৪ পয়সা। এর আগে ২০১৭ সালে ১ টাকা ১৪ পয়সা, ২০১৬ সালে ৭৩ পয়সা, ২০১৫ সালে ৬৪ পয়সা এবং ২০১৪ সালে ৫০ পয়সা ইপিএস ছিল।
বিগত নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানির পণ্য বিক্রি হয় ৩০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ সময় কোম্পানির আয় হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
কোম্পানির আয় অনুযায়ী, শেয়ার দরের অনুপাত (পিই রেশিও) অনেক বেশী। সাধারণত কোন কোম্পানির শেয়ারের ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য বিনিয়োগকারীরা পিই রেশিও দেখে থাকে। পিই রেশিও যত কম হবে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকি তত কম। অ-নীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পিই রেশিও ৬৪.৭২। আর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিই রেশিও ৬৭.৫। সাধারণত পিই রেশিও ১০ থেকে ২০ এর মধ্যে সহনীয়।
কোম্পানির বিগত ৫ বছরের লভ্যাংশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কখনোই তারা ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ শেয়ার, ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৯ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৭.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের লভ্যাংশ অনুযায়ী ডিভিডেন্ড ইল্ড (শেয়ারের বাজার দর অনুযায়ী প্রকৃত লভ্যাংশ) মাত্র ১.২৪ শতাংশ।
আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। ৩০ জুন ২০১৯ অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালকদের কাছে ৩৫.৩২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৬.৮৬ শতাংশ আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৭.৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার। পরিশোধিত মূলধন ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৫২৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged