সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন

বৈঠকের পরও পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব

তাৎক্ষণিক না হলেও দীর্ঘমেয়াদে সঙ্কট কাটার সম্ভাবনা

সময়: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯ ৮:৫৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ


নাজমুল ইসলাম ফারুক : পুঁজিবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের পরের দিন গতকাল মঙ্গলবার পতনমুখীবাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। উল্টো দুই স্টক এক্সেচেঞ্জেই সূচকের পতন ঘটেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাইড লাইনে অবস্থান, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ বাজারকে আরো পতনমুখী করে তুলছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরো আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘমেয়াদে সঙ্কট উত্তোরণে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে বর্তমান বাজারে যে আস্থার সংকট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, অতীতে দেখা গেছে মন্দা বাজার পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের খবরে বাজার ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যেতো। কিন্তু এবার অর্থমন্ত্রণালয় স্টেকহোল্ডারসহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করার পরের দিন বাজারে পতন হয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে তা সবই ইতিবাচক হলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সক্ষম নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা প্রায় পৌনে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। এর আগে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বরে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে অবস্থান করেছিল। এদিকে গতকাল ডিএসই’র প্রধান সূচকের পাশাপাশি অন্যান্য সূচকও কমেছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে, দীর্ঘ মন্দা বাজারের কারণে বিনিয়োগকারীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সাইড লাইনে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। আর আস্থার সংকট দূর করাসহ পুঁজিবাজার কি কারণে স্থিতিশীল হচ্ছে না, সে বিষয়গুলো খুঁজে বের করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে অর্থমন্ত্রণালয়। আর এ লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারসহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বৈঠকের পরদিন বাজার পতন সম্পর্কে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘পুঁজিবাজার উন্নয়নে বৈঠকের পরপরই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমনটি নয়। বৈঠকে নানা মতামত উঠে এসেছে তা পলিসি নিয়ে। আর এগুলো বাস্তবায়নে সময় দিতে হবে। এ বৈঠকের সঙ্গে বাজারে সূচকের ওঠা-নামার সম্পর্ক নেই।’

এদিকে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্র্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াদুজ্জামান হৃদয় ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন ‘সাধারণত পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, তা সার্কুলার জারি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হয় না। তাছাড়া বাজারে ওপর আত্মবিশ্বাসের একটি প্রভার রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের এই আত্মবিশ্বাসের একটু ঘাটতি রয়েছে। কিছুদিন সময় দিলে আশা করা যায় বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ‘পজেটিভ মুভ’। এ ধরনের উদ্যোগের প্রভাব গ্রাজুয়ালি বাজারে প্রভাব ফেলবে।”

প্রসঙ্গত, সোমবারের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বাজারে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা দূর করা হবে। যাতে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকে। যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

আইপিও-তে দর যাতে অতিমূল্যায়িত না হয় এবং পরবর্তীতে কোনো শেয়ারের দর অতিমাত্রায় কমে বাজার পরিস্থিতি খারাপ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তিনি জানান, বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব কোম্পানির কারখানা বন্ধ, উৎপাদনে নেই, জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে- তাদের আর্থিক অবস্থা তদন্তের জন্য বিএসইসি-কে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছি। তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তদন্তের প্রয়োজন হলে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) সহায়তা নেবে।

তিনি আরো জানান, সভায় বাজারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আরো কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। এরপরে শেয়ারবাজারের জন্য করণীয় কাজগুলো দ্রুত করা হবে।

ওই বৈঠকে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির আইপিও না আসা, নিরীক্ষা প্রতিবেদন নির্ভরযোগ্য না হওয়া, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থার কারণে বাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি দেশি-বিদেশি সব ধরনের ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে, আইপিও এর মান নিশ্চিত করতে, নিরীক্ষা প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আনয়নে এবং সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা দূর করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাজারে যেসব কোম্পানি আইপিওতে আসে তাদের আর্থিক প্রতিবেদনের মান নিয়ে আমরা বলতে পারি। প্রসপেক্টাসে যে আর্থিক প্রতিবেদন থাকে, সেটা কোম্পানি তৈরি করে। ইস্যু ম্যানেজার তা নিয়ে আসে এবং অডিটর সেটায় স্বাক্ষর করে। বাজারে আসার আগে আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির যে তথ্য থাকে, আইপিও আসার ২-৩ বছর পর সেই চিত্র থাকে না। বিনিয়োগকারীরা এই জায়গায় প্রতিনিয়ত আস্থাটা হারাচ্ছে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান/এনটি/

Share
নিউজটি ৪৬৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged