অনুপ সর্বজ্ঞ : সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানি উভয়ই যেন বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যবীমা করতে পারে সেজন্য পৃথক নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এরই মধ্যে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
জানা যায়, আইন অনুযায়ী পূর্নাঙ্গভাবে স্বাস্থ্যবীমা করার সুযোগ নেই জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর। তারা জীবন বীমার একটি অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যবীমা কভারেজ দেয় গ্রাহককে। অন্যদিকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্যবীমার কভারেজ দিয়ে থাকে বিবিধ শ্রেণিতে, যা বাধ্যতামূলক নয়। মূলত স্বাস্থ্যবীমার প্রসার বাড়াতে এটাকে সাধারণ এবং জীবন বীমা উভয়ের জন্য বাধ্যতামূলক করে পৃথক নীতমালা তৈরি করবে আইডিআরএ। এক্ষেত্রে কোন জীবন বীমা কোম্পানি পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাস্থ্যবীমার কভারেজ দিতে চাইলে তাকে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) খলিল আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবীমাকে বাধ্যতামূলক করতে পৃথক নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালের মানোন্নয়ন জরুরি বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’
আইডিআরএ সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবীমা ছাড়াও বেশ কিছু ব্যবসা লাইফ ও নন-লাইফ মিলেই করতে পারে। এক্ষেত্রেও একটি পৃথক নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আইডিআরএ জানায়, বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্য বীমার কার্যক্রম শুরু হবে তিনটি ধাপে। প্রথমে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য, দ্বিতীয় ধাপে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এবং তৃতীয় ধাপে দেশের সাধারণ প্রান্তিক মানুষ স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আসবে।
জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসায় যাতে পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে বা অন্যের কাছে হাত পাততে না হয় সেজন্য সমন্বিত বীমা ব্যবস্থা প্রণয়ন করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সুবিধাভোগীদের নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। প্রিমিয়ামের এ অর্থ চিকিৎসা ভাতার সমপরিমাণ হবে। ক্ষেত্র বিশেষে বেশিও হতে পারে। তবে গ্রাহক যদি অসুস্থ না হন তাহলে মেয়াদ শেষে পুরো টাকা ফেরত পাবেন।
গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের জন্য গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স নামে একটি ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো বীমা নয়। তাই সকল কর্মচারীকে বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থাটিকে সংস্কার করে জীবন বীমা কর্পোরেশনের সহযোগিতায় সমন্বিত বীমা ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হবে। জানা যায়, এসব কিছু করা হবে শ্রীলঙ্কার আগ্রাহারা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্বাস্থ্যবীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তবে এ বীমার জন্য সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। প্রিমিয়ামের টাকা কাটা হবে চিকিৎসা ব্যয় থেকে। সরকারি চাকরিজীবীরা চিকিৎসা খরচ বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এ ক্ষেত্রে পুরো টাকার অর্ধেক যাবে ফিক্সড ডিপোজিটের তহবিলে। বাকি টাকা যাবে প্রিমিয়াম খরচ হিসেবে। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি ক্ষতিপূরণের সর্বাধিকটা অর্থাৎ ৪০ লাখ টাকা পেতে চান তাহলে তার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম এক হাজার ৫০০ টাকার বেশিও হতে পারে। প্রিমিয়ামের টাকা থেকে হাসপাতালের ব্যয় বহন করা হবে। আর তহবিলের টাকা পাওয়া যাবে বীমার মেয়াদ শেষে।
এদিকে বেসরকারি খাতের সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলায় প্রকল্পটির কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামের দরিদ্র মানুষদের বীমা সেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকার এসব বীমা পলিসির প্রিমিয়াম দিচ্ছে। এই পাইলট প্রকল্পের সাফল্য পর্যালোচনা সাপেক্ষে এর আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে সরকার। এর মাধ্যমে একদিকে বীমা শিল্পের পরিধি বাড়বে, অন্যদিকে গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা আরেকটু বেশি নিরাপত্তা পাবেন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান
![](https://dailysharebazarprotidin.com/wp-content/uploads/2019/09/idra.jpg)
পৃথক নীতিমালা হচ্ছে
পূর্নাঙ্গ স্বাস্থ্যবীমা কভারেজের সুযোগ পাবে জীবনবীমা কোম্পানিগুলো
সময়: সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০১৯ ৯:৩৭:৩০ পূর্বাহ্ণ