আইনি অব্যাহতিসহ পুনরায় চাঁদা গ্রহণের আবেদন আশুগঞ্জ পাওয়ারের

সময়: সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০১৯ ৯:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহের জন্য পুনরায় আবেদন (রি-ওপেন) করেছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড। এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পাবলিক ইস্যু রুলসের শর্ত পরিপালন করতে না পারায়, কোম্পানিটি পুনরায় আবেদন করে। পাশাপাশি তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আইনের অব্যাহতিও চেয়েছে কোম্পানিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, কোম্পানিটি বন্ড ইস্যু করে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করার জন্য আইপিও আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর, যা শেষ হয় গত ৬ অক্টোবর। তবে নির্ধারিত সময়ে কোম্পানিটির মোট ৩৫ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ আবেদন পড়ে। এতে কোম্পানিটি সংশোধিত পাবলিক ইস্যু রুলস পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়।
তবে পুঁজিবাজারে বন্ড আনার ক্ষেত্রে ইস্যু সংশ্লিষ্ট আইন না থাকায় আইপিও রুলস পরিপালন করে বাজারে আসছে কোম্পানিটি। তাছাড়া কোম্পানিটি সরকারি প্রথম প্রতিষ্ঠান, যেটি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোম্পানিটি পুনরায় আবেদন গ্রহণসহ চারটি ক্ষেত্রে আইনের অব্যাহতি চেয়েছে।
কোম্পানিটি আবেদনে উল্লেখ করেছে, আইপিও চাঁদা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আবেদনে (প্রত্যেকে ২ শতাংশ করে) যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা আশুগঞ্জ পাওয়ারের ক্ষেত্রে তা অব্যাহতি প্রদান করা। এটা করা হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বেশি করে বন্ডে আবেদন করতে পারবে।
এদিকে আইপিও চাঁদা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর মধ্যে আলাদা কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। আশুগঞ্জ পাওয়ারের চাঁদা গ্রহণের ক্ষেত্রে এ কোটা ব্যবস্থা থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে শর্তপূরণ সহজ হবে। আর পুনরায় আবেদন গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা, যা ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় দেয়ার আইনি অব্যাহতি দেয়া। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে যে, ট্রেডিং চার্জ দিতে হয় তা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।
বিষয়টি নিয়ে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ আবুল মুনসুর ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারের নির্দেশে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করছে। তবে আবেদন গ্রহণে কোম্পানিটি পাবলিক ইস্যু রুলসের শর্ত পরিপালন করতে পারেনি। আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’কে জানিয়েছি। সংস্থাটি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
উল্লেখ্য, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার সাথে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আরো ৫০০ কোটি টাকা উত্তোলন করছে। তবে উত্তোলিত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ভূমি উন্নয়ন এবং সিভিল কাজের জন্য ব্যয় করা হবে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রাইমারি জ্বালানির জন্য ৩০ কোটি টাকা, যানবাহন কেনা বাবদ খরচ করা হবে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি সেবা বাবদ খরচ করা হবে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালে ১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং আইপিও বাবদ খরচ করা হবে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন প্রতিটি ৫ হাজার টাকার ইস্যু মূল্যের ২ লাখ নন-কনভার্টেবল, পুরোপুরি অবসায়নযোগ্য, কূপন বিয়ারিং বন্ড আইপিও’র মাধ্যমে ইস্যু করবে। এর মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও সিআইএসের ১০ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ বন্ড প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ বন্ড এনআরবিসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী এই বন্ড মার্কেটে ইক্যুইটি শেয়ারের মতো লেনদেন করতে পারবেন। তবে যারা এ বন্ড কিনে বিনিয়োগ করবেন, তারা নির্ধারিত হারে সুদ হিসেবে মুনাফা পাবেন। এই হার নির্ধারণ করা হবে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সাথে ৪ শতাংশ মার্জিনযুক্ত হার (যা সর্বনিম্ন সাড়ে ৮ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ শতাংশ)।
সাত বছর মেয়াদি বন্ডটির কূপন অর্ধবার্ষিক থেকে প্রদেয় হবে। ডিএসই থেকে ইস্যুয়ারের ব্যাংক হিসাবে তহবিল স্থানান্তরের দিন থেকে ১২ মাস পর প্রথম কূপন প্রদান করা হবে। বন্ডটি চার কিস্তিতে সম্পূর্ণভাবে অবসায়ন হবে। এর মধ্যে প্রথম তিন বছর পর চতুর্থ বছরে ২৫ শতাংশ, পঞ্চম বছরে ২৫ শতাংশ, ষষ্ঠ বছরে ২৫ শতাংশ এবং সপ্তম বছরে ২৫ শতাংশ অবসায়ন হবে।
৩০ জুন ২০১৭ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ২৬৫ টাকা ৯৬ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২২ টাকা ৭৮ পয়সা। বিগত পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১০ টাকা ৬৩ পয়সা। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির করপরবর্তী মুনাফা ১৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৬৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কাজ করছে। এছাড়া ট্রাস্টি হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৩৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged