নিজস্ব প্রতিবেদক : তফসিলি ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের ঘাটতিতে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে ১০টি ব্যাংকই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ঋণ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে বিপুল অঙ্কের ঋণখেলাপি হয়ে পড়ায় এসব ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোনালী, অগ্রণী, বেসিক, রূপালী, এবি, বাংলাদেশ কমার্স, ঢাকা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামী, সাউথইস্ট ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। চলতি বছরের গত জুন প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত জুন প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবশিষ্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২২টি ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকলেও সার্বিক হিসেবে পুরো ব্যাংক খাতই প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। উদ্বৃত্ত বাদ দিয়ে পুরো ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মার্চ ২০১৯ শেষে এই ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রভিশন ঘাটতিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে ৮৫২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকে ৯৮২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৫১১ কোটি ১১ লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংকে ৩২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ১২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৭২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, স্টান্ডার্ড ব্যাংকে ১০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, স্যোসাল ইসলামী ব্যংকে ৩৭০ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকে ১শ’ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ১৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রভিশন ঘাটতির কারণে শুধু এসব ব্যাংকের আমানতকারীরাই ঝুঁকিতে পড়েনি, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারীরাও। কারণ প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর পর ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা কমে যাবে। ঘাটতি হতে পারে মূলধনেও।
প্রসঙ্গত: ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণের সমপরিমাণ অর্থ প্রভিশন হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। মন্দ ঋণ বা ব্যাড লোনের বিপরীতে ১শ ভাগ, সন্দেহজনক ঋণ বা ডাউটফুল ঋণের বিপরীতে ৫০ ভাগ এবং সাব-স্টান্ডার্ড বা নিম্নমানের ঋণের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তিন মাসের বেশি অনিয়মিত ঋণকে নিম্নমান, ছয় মাসের বেশি অনিয়মিত ঋণকে সন্দেহজনক এবং ৯ মাসের বেশি অনিয়মিত ঋণকে মন্দ মানে শ্রেণিকৃত করতে হয়। আবার তিন বছরের বেশি সময় ধরে খেলাপি থাকা ঋণগুলোকে অবলোপন বা ব্লক হিসাবে নিতে পারে ব্যাংকগুলো। আগে এই সময় ছিল ৫ বছর। অবলোপনকৃত ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় না।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান
![](https://dailysharebazarprotidin.com/wp-content/uploads/2019/08/bank.jpeg)
প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ১৩ ব্যাংক
সময়: সোমবার, আগস্ট ২৬, ২০১৯ ৪:২৯:০০ পূর্বাহ্ণ