নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার গতিশীল করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় বাজার গতিশীল করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে ডিএসই। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না গুজবের কারণে। বাজারে গুজব বন্ধ করার জন্য প্রচলিত আইন শক্তভাবে পরিপালন করা হবে।
্আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ৬ নম্বর ভবনে শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসইর প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, শেয়ারবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনা, ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শিগগিরই চালু করা, বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা, গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিস্পত্তি করা, ডিএসই এবং শেয়ারবাজারের লেনদেনের উপর কর কমানো, অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, শেয়ারবাজার উন্নয়নে আইসিবি ও অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা, বাজারে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি করা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন এবং বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য দশ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব বিশেষভাবে বিবেচনা করা। প্রস্তাবনার বাইরেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ডিএসইর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। কিভাবে বাজাকে আরো গতিশীল করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ডিএসই কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এরমধ্যে তারা জানিয়েছে, সুশাসন (কমপ্লায়েন্স) ব্যবস্থা একটু দুর্বল, এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করার দাবি ছিল, এটিও আমরা বাস্তবায়ন করবো।
তিনি আরও বলেন, বাজারে আরেকটা রিউমার হলো টাকার ডিভ্যালুয়েশন, আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করবো না, এটা করার দরকার নেই। আমাদের রেমিট্যান্স খাতে ডিভ্যালুয়েশন করার কথা বলা হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশ। এক মাসে একটা আইটেমে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে ইতিহাসে প্রথম। এই রেকর্ড আর কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। এটা প্রমাণ স্বরূপ আনলাম এই কারণে, এখানে আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করিনি। শুধু এই খাতকে ২ শতাংশ ইনসেনটিভ দিয়েছি, যে কারণে আমরা এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। সুতরাং কোনো খাতেই টাকার ডিভ্যালুয়েশন করার সম্ভাবনা নেই।
মুস্তফা কামাল বলেন, একটা দাবি তাদের ছিল যে, আমরা কিছু ট্যাক্স কেটে নেই। অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স কেটে নেয়া হয়। লেনদেনের ক্ষেত্রে সেই রেটটা আমরা কমাতে পারি কি না। আমরা তাদের বলছি সেটা বিবেচনা করবো। তাদের আরো দাবি ছিল এক্সসেজ টু ব্যাংকিং ফাইন্যান্স। অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো ক্লাইন্ট ব্যাংকে গিয়ে টাকা বরো (ধার) করতে পারে, তেমনিভাবে শেয়ারবাজারে যারা ব্যবসা করেন তারাও সেই সুযোগটা যেন পায়।
তিনি বলেন, এই মুহুর্তে দেশের কারো জন্যই রেস্ট্রিকশন নেই যে ব্যাংকে যেতে পারবে না, আমরা বলছি ব্যাংক আইনে অন্যরা যেভাবে লোন পায়, সুযোগ সুবিধা পায়, শেয়ারবাজারে যারা ব্যবসা করেন, তাদের জন্যও সেই সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তবে সিকিউরিটি দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, শেয়ারবাজারের জন্য আরো ভালো দিক হলো তারা অতীতে টাকা লোন নিয়ে সরকারকে সেটা শোধ দিয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, তাদের জন্য আরো সুযোগ ভালো। এজন্য আমরা বলছি সেটাও থাকবে।
ভালো সরকারি শেয়ার বাজারে আনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আশ্বস্ত করছি, আমি এর উপর কাজ করছি, এটা করতে সময় লাগে। কিন্তু দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারবো না কবে নিয়ে আসবো। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে একমত ভালো শেয়ার, সরকারি শেয়ার, ফান্ডামেন্টাল স্ট্রং শেয়ারগুলো বাজারে নিয়ে আসার জন্য কাজটাও আমরা করবো।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনসহ তিন জন কমিশনার এবং ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান