২০১০ সালে মহাধসের কবলে পরে আমাদের দেশের শেয়ারবাজার। এরপর থেকেই বাজার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে কোনোটা বাস্তবায়ন হলেও অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং দিনের পর দিন আরো তলানীতে অবস্থান করছে।
নানা কারণে বাজারে ক্রান্তিকাল চলছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। অনেক দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ায় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পাশাাপাশি কারসাজির মাধ্যমে একটি চক্র প্রতিনিয়তই তাদের ইচ্ছেমতো দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে খেলছে। বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমেছে। মাঝে মধ্যে সূচক ও লেনদেন বাড়লেও তার স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ থাকছেনা। যে কারণে বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফেরাতে সময় নিচ্ছে।
বাজার স্থিতিশীলতায় বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অর্থমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো মিটিং করেছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় বাজার গতিশীল করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে ডিএসই। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না গুজবের কারণে। বাজারে গুজব বন্ধ করার জন্য প্রচলিত আইন শক্তভাবে পরিপালন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ৬ নম্বর ভবনে শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসইর প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, শেয়ারবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনা, ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শিগগিরই চালু করা, বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা, গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিস্পত্তি করা, ডিএসই এবং শেয়ারবাজারের লেনদেনের উপর কর কমানো, অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, শেয়ারবাজার উন্নয়নে আইসিবি ও অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা, বাজারে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি করা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন এবং বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য দশ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব বিশেষভাবে বিবেচনা করা। প্রস্তাবনার বাইরেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ডিএসইর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। কিভাবে বাজারকে আরো গতিশীল করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ডিএসই কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এরমধ্যে তারা জানিয়েছে, সুশাসন (কমপ্লায়েন্স) ব্যবস্থা একটু দুর্বল, এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করার দাবি ছিল, এটিও আমরা বাস্তবায়ন করবো।
শেয়ারবাজার নিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস ইতিবাচক, যদি তা দ্রুত বাস্তাবায়ণ করা হয়। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের দাবি, যে কোনভাবেই হোক বোজার আবারও স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সকল শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে ডিএসই’র ১১ প্রস্তাবনা
বাজার স্থিতিশলতায় দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি
সময়: রবিবার, জানুয়ারি ৫, ২০২০ ১:২১:৫৬ অপরাহ্ণ