অনুপ সর্বজ্ঞ : কোম্পানির সার্বিক পরিস্থিতি ও ব্যবসায়িক চিত্র পর্যবেক্ষণ করে অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস তৈরি করে অনুমোদনপ্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারি (সম্পদ ও দায় নিরুপনকারী)। কোম্পানির সম্পদ বেশি হলে সারপ্লাস থাকে। যা থেকে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে কোন জীবন বীমা কোম্পানি। কিন্তু সম্পদের তুলনায় দায় বেশি হলে লভ্যাংশ দেয়া নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।
জানা যায়, বছরের পর বছর অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশন করছে না বেশ কিছু জীবন বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে-বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ও আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ইতোমধ্যে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। জরিমানা ধার্যের প্রক্রিয়ায় আছে অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশন না করা বাকি কোম্পানিগুলো।
জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে টানা সাত বছর অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশন করেনি বায়রা লাইফ। জরিমানার এ মোটা অংকের টাকা মওকুফের জন্য আইডিআরএ বরাবর পুনঃআবেদনও করে কোম্পানিটি। তবে তা খারিজ করে দেয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘কোম্পানিটির পুনঃ আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ রিভিউ শুনানি করেই এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে জরিমানা মওকুফের আইনগত কোন সুযোগ আর নেই।’ আরও বেশ কিছু কোম্পানি জরিমানা ধার্যের প্রক্রিয়ায় আছে বলে তিনি জানান।
এর আগে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বায়রা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন অনিয়মের নানান চিত্র। এরই প্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর আইডিআরএ এর পরিচালক (উপসচিব) এ.কে.এম ফজলুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে বায়রা লাইফের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহেও সাময়িক স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোম্পানিটি কোনোভাবেই আর কোন নতুন পলিসি ইস্যু করতে পারবে না।
আইডিআরএর নোটিশে উল্লেখ করা হয় ‘সঠিক সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ না করা, তামাদি পলিসির পরিমাণ অধিক হওয়া, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, দীর্ঘদিন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ শূন্য রাখা, পরিচালকদের নির্ধারিত পরিমাণ শেয়ার ধারণ না করা, নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালনা পর্ষদে উপদেষ্টা সদস্য রাখা, নিবন্ধনের তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে না যাওয়া, বিধি মোতাবেক বিনিয়োগ না করা, বিধিবহির্ভূতভাবে অধিক মূল্যের পরিবহণ ব্যবহার করা, সঠিক সময়ে অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশন না করানো, কর্তৃপক্ষ বরাবর মিথ্যা তথ্য প্রদান করা, কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটিকে সঠিকভাবে সহযোগিতা না করা, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থতাসহ নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়াসহ প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বীমা খাত দিন দিন ইমেজ সংকটে পড়ছে।’
এছাড়াও বীমা আইন ২০১০ এর উল্লেখিত ধারা ও অন্যান্য বিধি-বিধান লংঘন করার কারণে, বায়রা লাইফে কেন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না এবং বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম কেন সাময়িক স্থগিত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। একই সাথে কোম্পানির সর্বশেষ পলিসির হালনাগাদ তথ্য আইডিআরএ এর নিকট দাখিলের নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশের প্রেক্ষিতে বায়রা লাইফের জবাব সন্তোশজনক মনে করেনি আইডিআরএ।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান