বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলোকে উপশাখা খোলার অনুমোদন দিয়েছে। এখন থেকে সিডিউল ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা মতো গ্রামাঞ্চলে উপশাখা খুলতে পরবে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো দেশের যেসব এলাকায় তাদের শাখা নেই সেখানে উপশাখা খুলতে পারবে। এতদিন ব্যাংকগুলো বুথ ব্যাংকিং করতে পারতো। নতুন সার্কুলার জারির ফলে অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং ব্যবসায়রত বুথগুলো আপনা আপনি উপশাখায় রূপান্তরিত হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলো চাইলে তাদের চাহিদা পছন্দনীয় স্থানে উপশাখা খুলতে পারবে। নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং বুথগুলো এখন থেকে উপশাখা নামে অভিহিত হবে। একইসঙ্গে পূর্বেকার আইনে ব্যাংকিং বুথ বুঝাতে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হতো তা উপশাখা শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। সার্কুলারে আরো বলা হয়েছে, উপশাখা ব্যাংকের একটি শাখার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। ইচ্ছে করলে ব্যাংকের শাখার মতো উপশাখাতেও নগদ টাকা সংরক্ষণের জন্য ভল্ট স্থাপন করা যাবে। তবে উপশাখার ভল্ট নিয়ন্ত্রণকারী শাখার ভল্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। ভল্টের নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় বীমা কভারেজ দিতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। উপশাখায় নিরবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উপশাখা পরিচালিত হবে তুলনামূলক স্বল্প ব্যয়ে। উপশাখায় কি কি ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাবে তা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। উপশাখার মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার চাহিদাকৃত সবধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। সার্কুলারে উপশাখার জন্য ভাড়াকৃত বাড়ির আকার এবং কতজন কর্মকর্তা কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। উপশাখার সার্ভিস চার্জ এবং অন্যান্য ব্যয় প্রচলিত শাখার তুলনায় কম হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিংসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবার দাবি রাখে। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বেসরকারি এবং বিদেশি মিলিয়ে মোট ৬২টি ব্যাংক ব্যবসায়রত রয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দেশের সব এলাকায় ব্যাংকিংসেবা সম্প্রসারিত করা সম্ভব হয়নি। নানা কারণেই ব্যাংকগুলো গ্রামীণ এলাকায় শাখা খুলতে খুব একটা আগ্রহী হয় না। ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো ব্যাংকিংসেবার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। প্রতিবেশি দেশ বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারতেও বাংলাদেশের মতো এত বিপুলসংখ্যক ব্যাংক নেই। বিশ্বব্যাংকিং ইতিহাসে দু’ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায়। এর একটি হচ্ছে ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং। ব্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কম সংখ্যক ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয় তারা বিপুলসংখ্যক শাখা স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুক্তরাজ্যের ব্যাংকিং ব্যবস্থা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে ইউনিট ব্যাংকিং হচ্ছে অল্প কয়েকটি শাখা নিয়ে এক একটি ব্যাংক স্থাপিত হয়। এভাবে জনগণের ব্যাংকিং চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুরসংখ্যক ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইউনিট ব্যাংকিং-এর চমৎকার উদাহরণ। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদ্যমান ব্যাংকগুলো পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে আধুনিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে বোধগম্য কারণেই ইউনিট ব্যাংকিং সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু আছে তা ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং বলা যেতে পারে। কিন্তু ব্যাংকগুলো গ্রামীণ জনপদে তাদের শাখা খোলার ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহী হয় না। এ কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা বাধ্য হয়ে আর্থিক কার্যক্রমের জন্য এনজিওদের নিকট ধর্ণা দেয়। এনজিওরা এ সুযোগে উচ্চসুদ চার্জ করে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে তাদের মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে উপশাখা ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেকটাই সহায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ব্যাংকের উপশাখা গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিংপ্রাপ্তি সহজ করবে
সময়: বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯ ৬:৩৪:৩১ অপরাহ্ণ