editorial

পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাইল ফলক হতে পারে

সময়: রবিবার, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০ ১২:৩০:৫৮ পূর্বাহ্ণ


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। সরকার এই এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে। এই অঞ্চলের যেসব ছেলে মেয়ে এখন পড়াশুনা করছে তাদের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরো বলেন,বিশ্বে কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ অনেক কষ্ট করে। আবার কোনো কোনো দেশে কাজ করার মতো মানুষ পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে কাজ করার মতো প্রচুর মানুষ রয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব রয়েছে। বর্তমান সরকার সবার জন্য কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে। ফলে আগামীতে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য,বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ বেশ দ্রুত গতিয়ে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই এই সেতুর বেশির ভাগ অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু সংলগ্ন জাজিরা পয়েন্টে ব্যাংক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন,পদ্মা সেতু নির্মিত হবার পর তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। বিশেষ করে দেশের জিডিপি’র পরিমাণ অন্ত ২ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পাবে। অর্থমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে এখন কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি। মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ এরা কর্মক্ষম। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার দু-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি যখন কর্মক্ষম থাকে সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। একটি জাতির জীবনে এই অবস্থা একবারই আসে। যারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগাতে পারে তারাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে। অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা খুবই বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। কোনো একটি অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া কিন্তু এমনি এমনি লাগে না। এ জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে এটা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের এ জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। পদ্মা সেতুতে প্রত্যক্ষভাবে হাজার খানেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে এই সেতু পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। উল্লেখ্য, সরকার যে উন্নয়ন কাজ করে তার উদ্দেশ্য থাকে উন্নয়নের জন্য রাস্তা বা পথ তৈরি করে দেয়া। সেই উন্নয়নের রাস্তাকে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা গড়ে তেলে। সেই সব প্রতিষ্ঠানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। পদ্মা সেতু তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদেরকে ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পদ্মা সেতু এককভাবে অর্থনেতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবে না। অন্যদের অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে মাত্র। তাই আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

 

Share
নিউজটি ৪২৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged