টানা মন্দা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের হঠাৎ উল্লম্ফন দেখা গেছে। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক বেড়েছে ১১১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক বেড়েছে ১৭৭ দশমিক ০৯ পয়েন্ট। প্রণোদনার অর্থ ছাড়করণে বাংলাদেশ ব্যাংককে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)-এর চিঠি এবং একইসঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ বিনিয়োগসীমার মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের কারণে গতকাল বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে উভয় স্টক একচেঞ্জের প্রধান সূচকে উল্লম্ফন দেখা গেলেও চিন্তিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ কারণে গতকালও তাদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তাদের মতে, এটা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতি নয়। এর মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। নানা প্রক্রিয়ায় মন্দা বাজারে কৃত্রিম উল্লম্ফন তৈরি করা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে একই দিনে (মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই) বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। টানা মন্দা বাজারে দুয়েকদিন হঠাৎ সূচক ও শেয়ার দর বাড়তেই পারে। এটা বাজারে দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন তারা।
প্রসঙ্গত: পুঁজিবাজারের টানা পতন ঠেকাতে গত সপ্তাহজুড়ে লাগাতার বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ১৫ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি দেন তারা। বিনিয়োগকারীদের অব্যাহত দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন’ (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেন এবং স্টক এক্সচেঞ্জে ‘অস্বাভাবিক’ ট্রেড ভলিউম খতিয়ে দেখতে গত রোববার চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজারের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, যেসব কারণে পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ আস্থার সংকট, কোম্পানির দুর্বল পারফরমেন্স, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা, ফরেন সেল বেড়ে যাওয়া ও পিপলস লিজিংয়ের বন্ধ ঘোষণা ইত্যাদি। কিন্তু এর বাইরে আরও একটি বড় কারণ থাকতে পারে। সেটা হচ্ছেÑ পুঁজিবাজারকে ঘিরে নতুন কোনো কারসাজি কিংবা বাজার খেলোয়াড়দের অদৃশ্য হাত। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে এ বিষয়টি অবশ্যই বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।