নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই) এর পরিচালক পদে দু’জন নির্বাচিত হয়েছেন। পরিচালক পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি পেয়েছেন ১৪৯ জনের ৮৬ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার ৮৩১ ভোট। পরিচালক পদে মো. শাকিল রিজভী ১৩৩ জনের ৮২ কোটি ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল রোববার ডিএসই’র মতিঝিল কার্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। ডিএসইর মোট ভোটার সংখ্যা ২৫৯ জন। এর মধ্যে ১৭৮ জন ভোটার পরিচালক নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন। এসব ভোটের মধ্যে ৮ জনের ভোট বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। ভোট গণনা শেষে ডিএসই’র নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবদুস সামাদ ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য হারুন উর রশিদ এবং মনজুর উদ্দিন আহমেদ। ডিএসই’র নির্বাচনে প্রার্থী ছিল তিনজন। এর মধ্যে মোহাম্মদ শামীম আফজাল ৫৬ জনের ১৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫১ ভোট পেয়েছেন।
ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ থেকে দু’জন সদস্য- শরীফ আতাউর রহমান এবং মো. হানিফ ভূঁইয়া অবসর গ্রহণ করেন। পরিচালকের দুই শূন্য পদ নবনির্বাচিতরা পূরণ করবেন। আজ ডিএসই’র বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নির্বাচিত দু’জন পরিচালককে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেবে ডিএসই।
এদিকে, গতকালের নির্বাচনে আলোচনায় ছিল ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী চীনের শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিদের নিয়ে। এ প্রতিনিধির হাতেই ছিল ডিএসই ভোটের প্রায় ৩৮ শতাংশ। চীনের প্রতিনিধি কোন কোন প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে তা আগ্রহের বিষয় ছিল। যারা এ ভোট পাবেন তারাই ডিএসই’র পরিচালক নির্বাচিত হবেন। আর অবশেষে চীনের প্রতিনিধিদের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ শাহজাহান এবং মো. শাকিল রিজভী।
নবনির্বাচিত পরিচালকদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মো. শাকিল রিজভী
শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাকিল রিজভী পুঁজিবাজারের অত্যন্ত সু-পরিচিত ব্যক্তিত্ব। শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেড ১৯৯৩ সালের ৪ নভেম্বর ডিএসই’র সদস্যপদ লাভ করে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মুরাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৩৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে জড়িত। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব মো. শাকিল রিজভী পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকাল ২০১০ সালে ডিএসই’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই সময় বাজারের নানা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি নিরপেক্ষতার সঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তী সময়ে ১৬ মার্চ ২০১১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আবারও ডিএসই’র প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ২০০৯ সালে ডিএসই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডিএসই’র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ২০০২ এবং ২০০৩ সালে ডিএসই’র মেম্বারস ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেয়ার ব্যবসা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। তিনি দেশে-বিদেশে পুঁজিবাজারের উপর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার এবং প্র্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মালয়েশিয়া, বম্বে, তুরস্ক, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেছেন।
মোহাম্মদ শাহজাহান
মোহাম্মদ শাহজাহান ডিএসই’র সদস্য জাহান সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ১৯৭৫ সালে তার মালিকানাধীন মো. শাহজাহান অ্যান্ড কোম্পানি ডিএসই’র সদস্য পদ লাভ করেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে নাম পরিবর্তন করে জাহান সিকিউরিটিজ করা হয়। এর আগেও তিনি ডিএসই’র পরিচালক পদে ছিলেন। ২০০৪ সালের মার্চ মাস থেকে ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি প্রথমবারের মতো পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার এবং গতকাল তৃতীয়বারের মতো পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। পাট রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তিনি মদিনা জুট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শমসের জুট মিলস্্ লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক, নরসিংদী জুট ট্রেডার্স এবং জাহান টেক্সটাইল মিলস্্ের ম্যানেজিং পার্টনারস্্। তিনি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি লন্ডন, নিউইউর্ক, থাইল্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনসহ দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজার বিষয়ক বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার, সভায় অংশগ্রহণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কানাডা ও আমেরিকাসহ ইউরোপের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান