ঝুঁকিতে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা

১৪টি জীবন বীমা কোম্পানির তহবিল ঋণাত্মক

সময়: বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৭, ২০১৯ ১০:৩৬:০৩ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে জীবন বীমা খাতের ১৪ কোম্পানির তহবিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়ার অর্থ হলো এসব কোম্পানির বিনিয়োগকারী ও বীমা গ্রহীতা উভয়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কারণ এ তহবিল থেকেই লভ্যাংশ বা বোনাস পেয়ে থাকেন জীবন বীমা কোম্পানির গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা।
জানা যায়, তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৬টি এবং অবশিষ্ট ৮টি তালিকাবহির্ভূত। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স।
তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোগুলো হলোÑ গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এলআইসি বাংলাদেশ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এ প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘জীবন বীমা কোম্পানির ব্যবসা বাড়াছে, কিন্তু তহবিলে টাকা থাকছে না। কারণ কোম্পানিগুলো তাদের পেন্ডিং ক্লেইম পরিশোধ করছে। ফলে জীবন বীমা তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। সময়মতো দাবি পরিশোধ করলে এমন অবস্থা তৈরি হতো না।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জীবন বীমা তহবিল যদি এভাবে ঋণাত্মক হতেই থাকে, তাহলে আগামী বছরগুলোতে এসব কোম্পানির লভ্যাংশ বা বোনাসের পরিমাণ আরও কমে আসবে। যা অবশ্যই বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে রয়েছে’ বলে জানান তিনি।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের জীবন বীমা তহবিল দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। যা ২০১৭ সালে ছিল ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে এ কোম্পানির তহবিল কমেছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ বলেন, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দাবি পরিশোধের কারণেই কোম্পানির তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। তবে আগামী বছরগুলোতে চাপ কমে আসবে। তাই বিনিয়োগকারী বা গ্রাহক কারোরই ভয়ের কিছু নেই। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে একই কথা বলেন পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম ইউসুফ আলী।
জানা যায়, ২০১৮ সালে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা ২০১৭ সালে ছিল ২ হাজার ২৮৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছর আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির তহবিল কমেছে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এদিকে, ২০১৮ সালে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকায়। যা এর আগের বছর ছিল ১২৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে কোম্পানিটির তহবিল কমেছে ৫৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৮ লাখ টাকায়। যা এর আগের বছর ছিল ২৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় গত বছর এ কোম্পানির তহবিল কমেছে ৯৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
আইডিআরএ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল দাঁড়িয়েছে ৩৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৮৫১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আগের বছরের তুলনায় গত বছর সন্ধানী লাইফের তহবিল কমেছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জানা যায়, ২০১৮ সালে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল দাঁড়িয়েছে ৩৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যা ২০১৭ সালে ছিল ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে কোম্পানিটির তহবিল কমেছে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
জানা গেছে, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর মধ্যে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ৭১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৯১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে গোল্ডেন লাইফের তহবিল কমেছে ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
এছাড়া, ২০১৮ সালে যমুনা লাইফের তহবিল কমেছে ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, এলআইসি বাংলাদেশের ১১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবালের ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, প্রটেক্টিভ লাইফের ১০২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ তহবিল কমেছে। এদিকে স্বদেশ লাইফের তহবিল কমেছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ট্রাস্ট লাইফের ১৮৫ দশমিক ৯১ শতাংশ ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল কমেছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৬২৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged