পাবলিক ও রাইট ইস্যুর তহবিল ব্যবহারে আইনে পরিবর্তন

সময়: বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৭, ২০১৯ ১০:২৮:০৩ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পাবলিক ইস্যু ও রাইট ইস্যুর তহবিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে না পারলে মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে বোর্ডসভা করে বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং তহবিল ব্যবহার করতে না-পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে কোম্পানিকে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন এনেছে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, আগে আইনে পাবলিক ইস্যু ও রাইট ইস্যুর তহবিল প্রসপেক্টাসে দেয়া নির্ধারিত খাতে ব্যবহার না করে অন্য খাতে ব্যবহার করতে চাইলে কোম্পানিকে ব্যাখ্যাসহ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হতো। তবে পরিবর্তিত আইনে ‘সময়’টা অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই আইনটি প্রসপেক্টাসের লিস্টিং প্রক্রিয়ার পার্ট-সি-এর ৬ ধারায় উল্লেখ থাকে। এ পরিবর্তনের ফলে কোম্পানিগুলো যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাবলিক ইস্যু ও রাইট ইস্যুর তহবিল ব্যবহার না করতে পারে; তাহলে কোম্পানিকে ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বোর্ডসভা করতে হবে। বোর্ডসভার অনুমোদিত সিদ্ধান্ত এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ ব্যবহার না করতে পারার ব্যাখ্যাসহ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এরপর এজিএম কিংবা ইজিএমের মাধ্যমে উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে ৫১ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের পর তা কমিশনে জমা দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি’র একজন কর্মকর্তা ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, কোম্পানিগুলো পাবলিক ইস্যু ও রাইট ইস্যুর তহবিল ব্যবহারে উদাসীনতার পরিচয় দেয়। তারা প্রসপেক্টাসে দেয়া নির্ধারিত পেরিয়ে গেলেও আইন পরিপালনে গড়িমসি করে। এতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ওই সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে আইনে সময়ের বিষয়টি উল্লেখ না থাকার কারণে কোম্পানিগুলো আইন পরিপালনে দুর্বলতা দেখায়। বিএসইসি বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে সংশোধনী এনেছে। ফলে এখন কোনো কোম্পানি তার আইপিও কিংবা রাইট ইস্যুও তহবিলের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে না পারলে মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করবে। পাশাপাশি অর্থ ব্যবহার না করতে পারার বিষয়টি বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানি তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘আমান কটন অ্যান্ড ফেব্রিক্স’ নির্ধারিত সময়ে ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ অর্থ ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি আইপিও অর্থের মোট ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৩ টাকা বা ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ খরচ করেছে। এখনো ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ বা ৭২ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪৭ টাকা খরচ বাকি রয়েছে।
‘ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইপিও’র ৭৭ শতাংশ অর্থ ব্যবহারে ব্যর্থ হয়। কোম্পানিটি আইপিও অর্থের মোট ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৬৭ টাকা বা ২২ দশমিক ৮৮ শতাংশ খরচ করেছে। তবে ৭৭ দশমিক ১২ শতাংশ বা ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৩ টাকা খরচ বাকি থাকে। আর তিন দফা সময় বাড়িয়ে রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস আইপিওর অর্থ ৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৩ টাকা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। যা মোট অর্থের ৬৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বাকি ৩৬ দশমিক ৪১ শতাংশ অর্থ বা ৪৫ কোটি ১ হাজার ৫৯৭ টাকা অব্যবহৃত রয়ে যায়। এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি রাইট ইস্যুর ৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা ৪৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ খরচ করেছে। তবে ৫০ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ৫৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ বাকি রয়ে যায়। কোম্পানিগুলোর আইপিও এবং রাইট ইস্যু তহবিলের টাকা ব্যবহারে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪১৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged