আইসিবিকে ৩০০০ কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টি দেওয়ার পরিকল্পনা

সময়: রবিবার, জুন ২৩, ২০২৪ ১১:১৭:৩২ পূর্বাহ্ণ


বিশেষ প্রতিনিধি : সরাসরি ঋণ নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৩ হাজার কোটি টাকার ‘সভরেন গ্যারান্টি’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ গ্যারান্টি পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকার ঋণ নিতে পারবে আইসিবি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েক বছরে কয়েক দফায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তারল্য সংকট মেটাতে সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ চেয়ে আসছিল আইসিবি। তবে আর্থিক সংকটে থাকা সরকারের পক্ষে সরাসরি ঋণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটির ঋণে সরকার ‘গ্যারান্টার’ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এফআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, আইসিবির ঋণ আবেদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার আইসিবিকে সরাসরি ঋণ দিতে পারবে না। তবে গ্যারান্টি চাইলে, তা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। এজন্য আইসিবিকে আবেদন করতে হবে।

এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো আবেদন মন্ত্রণালয় পায়নি।

জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, গ্যারান্টি পেতে সরকার নির্ধারিত ফরম্যাটে কিছু নথিপত্রসহ আবেদন করতে হয়। এসব নথি প্রস্তুতে কাজ চলছে। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। সরকারের কাছে কত টাকার ঋণ গ্যারান্টি চাইবেন– এমন প্রশ্নে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আইসিবি ৫ হাজার কোটি টাকা চায়। এখন সরকার কতটা দেবে, তা তো বলতে পারি না।’

তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিল আইসিবি। তবে ১৩ জুন চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সরকার গ্যারান্টার হলে ঋণ দিতে আপত্তি নেই। সরকারের কাছ থেকে গ্যারান্টি না নিয়ে কেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ আবেদন করলেন– এমন প্রশ্নে আইসিবির এমডি বলেন, ‘অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতোই ঋণ পেতে আবেদন করেছিলাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সরকার গ্যারান্টি দিলে ঋণ দেবে। তাদের এ চিঠির সূত্র ধরে এখন সরকারের কাছে গ্যারান্টি পেতে আবেদন করব।’

সরকারের গ্যারান্টিতে ঋণ পেলে ওই টাকা কী কাজে ব্যবহার করবেন– জানতে চাইলে আবুল হোসেন দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, আইসিবির পরিকল্পনা হলো, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকার ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেওয়া উচ্চ সুদের পুরোনো ঋণের কিছুটা পরিশোধ করা। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ঋণের ৫০ অনুপাত ৫০, অর্থাৎ অর্ধেকটা ঋণ পরিশোধে এবং বাকিটা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা আছে। তবে এ হার ৬০ অনুপাত ৪০-ও হতে পারে।

গত ৩১ মার্চ ২০২৩ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে আইসিবির কাছে সরকারের ঋণ ছিল ৮১৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ আছে ৩১১ কোটি টাকা। গত বছরের জুনের শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণও একই ছিল। তবে বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ ছিল ৩৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে আইসিবি বেসরকারি ব্যাংকের ৪৬ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে।

আইসিবি প্রকাশিত গত ৩০ মার্চ ২০২৩ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী ২৬৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে কর-পরবর্তী ৪৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা ছিল।

এই লোকসানের কারণে ছিল গত বছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ঋণ ও ডিপোজিটের বিপরীতে সুদ বাবদ আইসিবির ব্যয় ছিল ৬৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, আইসিবির নিজে ১৩৬ কোটি টাকা সুদ আয় করেছে। এতে সুদ বাবদ নিট ব্যয় দাঁড়ায় ৫৩৮ কোটি টাকা।

সুদ বাবদ বড় অঙ্কের ব্যয়ের বিপরীতে শেয়ার কেনাবেচা ও লভ্যাংশ বাবদ আয় কমায় তার প্রভাবে লোকসান হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে লভ্যাংশ আয় হয়েছে ২৮৭ কোটি টাকা, যা গত হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ৩১৬ কোটি টাকা। এ সময়ে শেয়ার বিক্রি থেকে নিট ১০৫ কোটি টাকা ক্যাপিটাল গেইন বা মূলধনি মুনাফা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ২০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্রোকারেজ আয় ১৩৫ কোটি টাকা থেকে কমে ১১৩ কোটি টাকায় নেমেছে।

ঋণ করে পুরোনো ঋণ পরিশোধের কারণ ব্যাখ্যায় আইসিবির এমডি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদহার অনেক বেশি। সরকারের গ্যারান্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ মিলবে। এতে সুদ ব্যয় বাবদ খরচ কমবে।

Share
নিউজটি ১৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged