“ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ফেরত দিন”— সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের দাবি

সময়: শনিবার, অক্টোবর ১১, ২০২৫ ৭:৩২:২৫ অপরাহ্ণ

দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) বর্তমানে এস আলম গ্রুপের অবৈধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে ‘সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম’। তাদের দাবি, ব্যাংকটির ৮২ শতাংশ শেয়ার এখনো এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফোরামটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জব্দকৃত শেয়ারগুলো অবিলম্বে লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে ব্যাংকের প্রকৃত মালিকদের কাছে মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব দাবি জানান।

‘অবৈধ নিয়ন্ত্রণ’ ও আর্থিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্যসচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক একসময় দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থার প্রতীক ছিল, কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে এটি রাজনৈতিক প্রভাব ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে পরিণত হয়েছে।

প্রধান অভিযোগসমূহ:

শেয়ার জব্দ, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেই:
বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের ৮২ শতাংশ শেয়ার জব্দ করলেও তা লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যবহার করা হয়নি, যা আইনি ও আর্থিক অনিয়ম বলে দাবি করেন তিনি।

২০১৭ সালের ‘দখল’ অভিযান:
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি একটি বিশেষ বাহিনীর সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক দখল করা হয়— দাবি করে তিনি বলেন, পরে শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্তে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়, যা কোম্পানি আইন ও ব্যাংকের সংবিধানের পরিপন্থী।

অর্থপাচার ও এলসি অনিয়ম:
ইসলামী ব্যাংক দখলের পর এস আলম গ্রুপ তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের এলসি অনুমোদন দেয়, অথচ অন্য প্রতিষ্ঠানের এলসি বন্ধ করে দেয়। এতে অর্থপাচার ও ব্যাংকের তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়।

অবৈধ নিয়োগে ক্ষতির পাহাড়:
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দখলের পর ৮,৩৪০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার ফলে বছরে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। গত সাত বছরে ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

ফোরামের তিন দফা দাবি
সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম ইসলামী ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তিনটি মূল দাবি উত্থাপন করেছে—

১️⃣ এস আলম গ্রুপের জব্দকৃত শেয়ার অবিলম্বে লিকুইডেশন বা বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকের দায় পরিশোধ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
২️⃣ ব্যাংকের মালিকানা প্রকৃত মালিক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে ফেরত দিতে হবে।
৩️⃣ অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করে মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার হুমকি
বক্তারা সতর্ক করেন, ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্যাংক খাতের আস্থার প্রতীক ছিল। এখন যদি রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে এই ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়, তাহলে পুরো আর্থিক খাত অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক, বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ. ন. ম. আতাউল্লাহ নাঈম, নিউ অটো গ্যালারির স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম আলম, এবং উদ্যোক্তা আল মামুন প্রমুখ।

📊 সারসংক্ষেপ

  • ইসলামী ব্যাংকের ৮২% শেয়ার এখনো এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে

  • ২০১৭ সালে ‘বিশেষ বাহিনীর সহায়তায়’ ব্যাংক দখলের অভিযোগ

  • অবৈধ নিয়োগ: ৮,৩৪০ জন, ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

  • জব্দকৃত শেয়ার লিকুইডেশন ও মালিকানা ফেরতের দাবি

  • সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের তিন দফা প্রস্তাব

 

Share
নিউজটি ৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged