উচ্চ সুদেও ঋণ পাচ্ছে না ব্রোকারেজ হাউজগুলো

সময়: বুধবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯ ১২:০৩:২৩ পূর্বাহ্ণ


সাইফুল শুভ : ভয়াবহ তারল্য সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজার পরিস্থিতি মন্দা হওয়ায় ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পাচ্ছে না। উচ্চ সুদে ঋণ নেয়ার জন্য তদবির করে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউজগুলো। মূলত শেয়ারবাজার পরিস্থিতি মন্দা হওয়ায় কেউই এ খাতে ঋণ দিতে সাহস পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

গত এক মাসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ২৩০ পয়েন্ট। বর্তমানে ডিএসইএক্স সূচক ৫০০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ডিএসইর লেনদেনও ৪শ’ কোটির ঘর ছাড়াচ্ছে না। অপর শেয়ারবাজার চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসইএক্স সূচকও কমে ৯২৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউজ বলছে, তারা অনেক ব্যাংকের কাছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে রাজি হলেও ব্যাংকগুলো টালবাহানা করছে। অনেক ব্যাংক প্রথমে রাজি হলেও পরে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে না করে দিচ্ছে। এছাড়াও এক্সপোজার লিমিটের (একক শেয়ার ধারণসীমা) কারণে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সহযোগী (সাবসিডিয়ারি) কোম্পানিকেও ঋণ দিতে পারছে না। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলো চরম তারল্য সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে।

জানা গেছে, চলমান রিং সাইনের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদন করার জন্য অনেকে টাকার সংস্থান করতে পারছে না। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউজই তাদের কোটা অনুপাতে পুরোপুরি আবেদন করতে পারবে না।

অব্যাহত বাজার মন্দার কারণে একদিকে লেনদেন কমছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর, অন্যদিকে তারল্য সঙ্কট থাকায় কাক্সিক্ষত ঋণও দিতে পারছে না। ফলে পরিচালন লোকসানের আতঙ্কে ব্রোকারেজ হাউজগুলো।

জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ শর্তে ঋণ দিতো। কিন্তু অনেক হাউজে ঋণের হিসাবগুলো নেতিবাচক (নেগিটিভ ইক্যুইটি) হয়ে আছে। ফলে তারা মূল প্রতিষ্ঠানকে ঋণের টাকা দিতে পারছে না। গ্রাহকদেরকেও লোকসানের মধ্যে বিক্রি করতে বলতে পারছে না।

এ বিষয়ে সিএসই’র সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি খারাপ হলে সব দিক থেকেই হতাশাজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে অনেক ব্রোকারই তাদের ব্যবসার দিকে মনোযোগী নয়। সবাই অন্যান্য ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের সব শাখা অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু প্রধান কার্যালয়ে যেটুকু ব্যবসা হয়, সেটার উপর টিকে আছে। অনেক ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালনা ব্যয়ে লোকসান গুনছেন। অন্যদিকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।’

এ বিষয়ে একাধিক ব্রোকারেজ হাউজ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের সাবসিডিয়ারি থেকে ঋণের টাকা ফেরত নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এক্সপোজার লিমিট নিয়ে তারা আতঙ্কিত।

অন্যদিকে লিজিং কোম্পানিগুলো থেকে গ্রাহকরা আমানতের টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে আরও অস্বস্তিতে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উচিত এ মুহূর্তে একটি বড় তহবিল গঠন করে পুঁজিবাজারকে সহায়তা করা। অন্যথায় ব্রোকারেজ হাউজগুলো গত কয়েক বছরের অব্যাহত লোকসানে চলতে থাকলে একপর্যায়ে ধসে পড়বে।

এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুজিব উদ্দিন আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘বাজারের তারল্য সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে আইসিবি বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। খুব শিগগিরই তা দৃশ্যমান হবে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকেও ঋণ দেয়া অব্যাহত রেখেছে।’
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪০০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged