নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কেঅ্যান্ডকিউ বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ারে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি ও লেনদেনের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, আর এই প্রেক্ষিতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
বিএসইসির সহকারী পরিচালক লামিয়া আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ডিএসইকে কেঅ্যান্ডকিউ শেয়ারের অস্বাভাবিক লেনদেন ও দরবৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাজারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৫ জুন কেঅ্যান্ডকিউ’র শেয়ারের দাম ছিল ১৯০ টাকা ৭০ পয়সা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ৬ অক্টোবর শেয়ারটির দর বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫০ টাকা ৯০ পয়সায়, যা গত দুই বছরের সর্বোচ্চ দাম।
এর পরদিন, ৭ অক্টোবর (সোমবার) শেয়ারটির দর সামান্য কমে ৪৪২ টাকা ৫০ পয়সায় অবস্থান করছে।
অর্থাৎ, অল্প সময়ের মধ্যেই শেয়ারটির দাম বেড়েছে প্রায় ১৩১ শতাংশ, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর কাড়ার মতোই একটি অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কেঅ্যান্ডকিউ’র এই অস্বাভাবিক গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ ও ‘কারসাজির সম্ভাবনাময়’। সংস্থার মতে, বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং বাজারের স্বচ্ছতা বিঘ্নিত করে।
ইতোমধ্যেই বিএসইসি স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে, যেন কেউ বাজারে ম্যানিপুলেটিভ লেনদেনে জড়িত না হয়।
বিএসইসি স্পষ্ট জানিয়েছে, এই ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন গুরুতর বিধিভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে।
এটি সিকিউরিটিজ আইনের দ্বিতীয় তফসিলের আচরণবিধি ৬ ও ৮, এবং সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০-এর বিধি ১১ লঙ্ঘনের শামিল।
বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ আবুল কালাম তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে কেঅ্যান্ডকিউ’র শেয়ারে যে অস্বাভাবিক লেনদেন ও দরবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের নজরে এসেছে। এজন্যই ডিএসইকে সুনির্দিষ্টভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন কারসাজির কোনো উপাদান আছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “কেঅ্যান্ডকিউ ও জিকিউ বলপেনসহ যেসব কোম্পানির লেনদেনে অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে, আমাদের সার্ভিল্যান্স টিম সেগুলো বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে। এবার কারসাজি করে কেউ পার পাবে না — আমরা সেটি নিশ্চিত করতে চাই।”
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই তদন্ত নির্দেশনার মাধ্যমে বিএসইসি বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের বার্তা দিচ্ছে। তারা আশা করছেন, দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কারসাজি প্রবণতা কমে আসবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।