“গুজব নয়, গণতান্ত্রিক আচরণ দরকার”—শেয়ারবাজারে কঠোর বার্তা প্রধান উপদেষ্টার সহকারীর

সময়: বুধবার, অক্টোবর ২২, ২০২৫ ১১:৫২:৫১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের সংস্কার ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সকল অংশীজনকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সততা চর্চা এবং সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও (বিএসইসি) স্বায়ত্তশাসিতভাবে কাজ করতে হবে।”

বুধবার (২২ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি’র মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত ‘শেয়ারবাজার অংশীজনদের চতুর্থ মাসিক সমন্বয় সভায়’ তিনি এই মন্তব্য করেন।

সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনারবৃন্দ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

🗣️ “হতাশ নয়, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে”—ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী
সভায় ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। গণতান্ত্রিক আচরণ ও সততা চর্চা ছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। সামষ্টিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং গুজব ছড়ানো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শেয়ারবাজার নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং বাস্তব অবস্থা বুঝে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”

তিনি সভায় সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল)-এর রেজিস্ট্রেশন দ্রুত সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যকর করার কঠোর নির্দেশনা দেন।

🏛️ বিএসইসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সভায় বলেন, “শেয়ারবাজারের সংস্কার ও উন্নয়নে কমিশনের গৃহীত উদ্যোগগুলো দ্রুত এগিয়ে চলছে। মার্জিন বিধিমালা ২০২৫, মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০২৫, এবং পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ রুলস ২০২৫ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।”

তিনি জানান, নতুন মার্জিন বিধিমালা অচিরেই গেজেটে প্রকাশ করে কার্যকর করা হবে, তবে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজনে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় রেখে সমন্বয়ের সুযোগ থাকবে।

📊 সভায় আলোচিত বিষয়সমূহ
সভায় পুঁজিবাজারের সংস্কার, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেন—

  • মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ

  • সার্ভেইল্যান্স আধুনিকায়ন ও সেটেলমেন্ট সময় হ্রাস

  • কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ও ফিউচারস মার্কেট চালু করা

  • রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা

  • মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যপরিধি বৃদ্ধি ও নেগেটিভ ইক্যুইটি সমাধান

  • অনিয়ম ও কারসাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ

বিএসইসি চেয়ারম্যান সভার শেষভাগে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কমিশন সর্বোচ্চ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।”

🧭 বিশ্লেষণ: বার্তার গভীরে আস্থা পুনর্গঠনের ইঙ্গিত
বিশ্লেষকদের মতে, ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর এই বার্তা বাজারে সরকারি পর্যায়ে নীতিগত সহায়তা ও কাঠামোগত সংস্কারের নতুন ইঙ্গিত দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বার্তা, যা বাজারে আস্থা ফেরাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

 

Share
নিউজটি ২০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged