নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অবকাঠামো দ্রুত উন্নত হলেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতার অভাব এখনো বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন, সিএফএ বলেছেন, তথ্যপ্রবাহে এই ঘাটতি বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কঠিন করে তুলছে এবং বাজারে আস্থা পুনরুদ্ধারে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
বুধবার (০৮ অক্টোবর) ঢাকায় আয়োজিত “Empowering Investors through Emerging Technology and Digital Finance” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। এটি বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ।
🔍 বাজারে স্বচ্ছতার অভাব ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, “প্রযুক্তিতে বড় বিনিয়োগ সত্ত্বেও শেয়ারবাজার এখনো প্রত্যাশিত সুফল পাচ্ছে না।”
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক কোম্পানি তাদের আর্থিক তথ্য সময়মতো ও সঠিকভাবে প্রকাশ করছে না, ফলে বাজারে গুজব ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তকে বিভ্রান্ত করছে।
অন্যদিকে, সিএসই চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, “অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের পরও কিছু অনিয়ম ও প্রতারণা ঘটে চলেছে। প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে রিপোর্টিং, সারভেলেন্স ও মনিটরিং সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
💡 বিএসইসির নতুন উদ্যোগ: মেশিন-রিডেবল ফরম্যাটে প্রতিবেদন
বিএসইসি কমিশনার সাইফুদ্দিন বলেন, “আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ইনভেস্টমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চাই। এজন্য প্রযুক্তিগত ঘাটতি ও জবাবদিহিতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।”
তিনি জানান, বিএসইসি ইতোমধ্যে Extended Business Reporting Model (SBRM) ফরম্যাটে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলের উদ্যোগ নিয়েছে।
এই মেশিন-রিডেবল আন্তর্জাতিক ফরম্যাটটি চালু হলে গবেষণা, বিশ্লেষণ ও নজরদারি অনেক সহজ হবে, যা স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, “এই উদ্যোগ সফল করতে অডিটরসহ সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা না আনলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বাজারে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে—এখনই সময় যৌথভাবে দায়িত্ব নেওয়ার।”
🧠 বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, “উদীয়মান প্রযুক্তি, ব্লকচেইন ও ডিজিটাল ফাইন্যান্স বিনিয়োগকারীদের ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত খুলেছে। তবে রিয়েল-টাইম তথ্যের সীমিত প্রাপ্যতা ও ডিজিটাল প্রতারণার ঝুঁকি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।”
সিডিবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোতালেব চৌধুরী জানান, বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ই-সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
তিনি বিনিয়োগকারীদের মোবাইল, ইমেইল ও টিআইএন হালনাগাদ রাখার আহ্বান জানান, যাতে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সময়মতো পৌঁছায়।
সমাপনী বক্তব্যে ডিএসই পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামান বলেন,
“আমাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি নিজস্বভাবে তৈরি করতে হবে, না হলে প্রযুক্তি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করতে হবে।”
🧭 বিশ্লেষণ: আস্থা পুনরুদ্ধারে স্বচ্ছতা অপরিহার্য
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তির অগ্রগতি থাকা সত্ত্বেও তথ্যপ্রকাশে স্বচ্ছতার ঘাটতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করছে।
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কার্যকর করতে হলে শুধুমাত্র সফটওয়্যার নয়, বরং তথ্য ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা ও নিয়মিত প্রকাশনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
তারা মনে করেন, স্বচ্ছতা ফিরলে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।