সর্বনিম্ন স্থিতির নীতিমালা মানা হচ্ছে না

দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে বিএসইসি’র সর্তক

সময়: রবিবার, অক্টোবর ২০, ২০১৯ ৯:১১:২৬ পূর্বাহ্ণ


সাইফুল শুভ : ব্রোকারেজ হাউজগুলো নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স (সর্বনিম্ন স্থিতির নীতিমালা) মানছে না। যেসব ব্রোকারেজ হাউজ নিয়ম মত রিপোর্ট জমা দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। এজন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

জানা যায়, ভবিষ্যতে কোনো স্থিতি নিয়ে কোনো জটিলতা হলে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্পষ্টভাবে বলেছে বিএসইসি। কিন্তু একটি স্টক এক্সচেঞ্জ একেবারেই উদাসীন এ ব্যাপারে। তবে সংস্থাটির চিঠিতে কোনো স্টক এক্সচেঞ্জের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউজের উচিত নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স মেনে চলা। যদি কোনো ব্রোকারেজ হাউজ এটি পরিপালন না করেন, তাহলে বিএসইসি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এটি গুরুতর একটি অপরাধ।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বলেন, পুঁজিবাজারের মন্দা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে- এ সময় নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স সংক্রান্ত প্রতিবেদন সঠিক সময়ে প্রদান করা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ অনেকেই বাধ্য হয়ে নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স ঘাটতি করছে। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, কোন স্টক এক্সচেঞ্জ সবচেয়ে উদাসীন- সে বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত ছিল। তাহলে আরও সচ্ছতা আসতো।

জানা গেছে, প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজের সম্পদ এবং দায় হিসেবের পর ন্যূনতম এক লাখ টাকা হিসাবে স্থিতি থাকতে হবে। কিন্তু বাজারের এই অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে অনেকেই এটি পরিপালন করতে পারছে না। এটি শাস্তিমূলক একটি অপরাধ। তাই এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বিএসইসি।
এদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক ব্রোকারেজ হাউজ তাদের সর্বনিম্ন স্থিতি দেখাতে পারেনি। বিএসইসি এসব ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ডেকেছে। আজ রোববারও বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউজকে ডাকা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্লিপ্ততার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর বিএসইসির সুপারভিশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব ইন্টারমিডিয়ারিজ (এসআরআই) বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো তাদের সব ট্রেক হোল্ডারদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক সাইদুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স নিয়ে বিএসইসি এ ধরনের কোনো চিঠি দিয়েছে কি-না আমার জানা নেই। তবে এটি স্টক এক্সচেঞ্জ ভালো বলতে পারবে। নতুন করে ক্যাপিটাল অ্যাডিউক্যাসি রেশিও নিয়ে যে নীতিমালা করেছে সেটি বাস্তবায়ন হলে নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স হিসাব আরও সহজ হবে।’

জানা গেছে, কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠানের নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স রিপোর্ট সময়মতো জমা প্রদান না করলে তার নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্সে ঘাটতি রয়েছে বলেও ধরে নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘বিএসইসি নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স নিয়ে কঠোর হয়েছে। এটি ঠিকই আছে। এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ হাউজ সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রুলস ১৯৮৭-এ ৩ এর ২, ৩, ৪, ৫ এ বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিটি সদস্য সব সময় তার মূল হিসাবে নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স মেনটেইন করবে যা কখনও এক লাখ টাকার কম হতে পারবে না। যদি নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স এক লাখ টাকার কম হয়- তবে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেক সনদ স্থগিত করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান ওই পরিমাণ টাকা তার নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্সে সংযুক্তি না করছে। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রত্যেক মাস শেষ হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জে নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে জমা প্রদান করবে।

বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি সূত্র বলছে, প্রত্যেক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের জন্য নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স সংক্রান্ত প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়। তাই প্রতি মাসের প্রতিবেদন মাস শেষ হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে জমা প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই প্রতিবেদনে নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স ঘাটতি থাকলেও তার লেনদেন স্থগিত রাখা হয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রতিষ্ঠানটি নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স ঘাটতি দূর করতে পাবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৯১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged