নিজস্ব প্রতিবেদক:ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে অনিয়মের পাহাড় জমেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি (এনটিসি) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুস্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে রাইটস ইস্যুর তহবিল থেকে ২৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অথচ এ সময় চা বাগানের শ্রমিকদের ১৭ সপ্তাহের বেতন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতন বকেয়া রয়ে গেছে।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছিল, সরকারের ৫১ শতাংশ শেয়ার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাইটস ইস্যুর টাকা ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ন্যাশনাল টি সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে চলতি বছরের জুলাইয়ে গোপনে এই অর্থ ব্যয় করেছে, যা মূলত ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ প্রস্পেক্টাসে স্পষ্ট বলা ছিল, রাইটস ফান্ডের ব্যবহার হবে ঋণ পরিশোধ, কার্যনির্বাহী মূলধন জোগান এবং চা বাগান ও কারখানা উন্নয়নে।
প্রায় এক বছর ধরে কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন। এই গোপনীয়তা বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরই মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের সুবিধা বহুগুণ বাড়িয়েছে। পরিচালকদের সভা ফি ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা কোম্পানির গঠনতন্ত্রের ১২৮ নম্বর ধারা এবং বিএসইসির ২০২১ সালের নির্দেশনা উভয়ই লঙ্ঘন করে। আইন অনুযায়ী, এজিএম-এর অনুমোদন ছাড়া সভা ফি বাড়ানো যায় না এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির পরিচালক সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার বেশি নিতে পারেন না।
আগে কর কেটে প্রতি সভায় পরিচালকরা যেখানে ৫ হাজার ৪০০ টাকা পেতেন, এখন পাচ্ছেন ১০ হাজার ৮০০ টাকা। শুধু তাই নয়, স্বতন্ত্র পরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মামুন রশীদকে মাসিক ৭৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছে, কর কাটার পর যা দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। কাগজপত্রে এই খরচ দেখানো হয়েছে বিনোদন, যাতায়াত ও টেলিফোন সুবিধার খাতে। অভিযোগ ওঠার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ভাতা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল টি অনিয়মের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শেয়ারের দামের কারসাজি, শ্রমিক সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো, এমনকি সিন্ডিকেটের কাছে বাজারদরের চেয়ে কম দামে চা বিক্রির মতো কর্মকাণ্ড এখন নিয়মিত। এর ফলে কোম্পানির ব্যাংক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়।
বর্তমানে শ্রমিকদের ১৭ সপ্তাহের বেতন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতন এবং বাগানের ছয় মাসের বিদ্যুৎ বিল অদায় রয়ে গেছে।
সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, পরিচালকরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোম্পানিকে এই সংকটে ঠেলে দিচ্ছেন, যাতে সরকারকে বোঝানো যায়—বেসরকারি খাতে হস্তান্তরই একমাত্র সমাধান। কিন্তু সবকিছু জানার পরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং অভিযোগ রয়েছে, তারা উল্টো পরিচালক ও চেয়ারম্যানের অনিয়মে নীরব সহযোগী হয়ে উঠেছে।