নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ও অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ধারাবাহিক পতনের পেছনে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে ফেলেছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে উঠছিল এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূচক ও লেনদেন দুটিই ইতিবাচক ছিল। এতে নতুন বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণও বেড়েছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এনবিআর-এর বিতর্কিত চিঠির পর বাজার কিছুটা চাপের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, বিএসইসির ধারাবাহিক বিতর্কিত নির্দেশনায় আবারও বাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়।
তাদের মতে, সর্বশেষ মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগকারী সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের পরিপন্থী ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ জরুরি হলেও, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সে দিকটি বিবেচনা করছে না—বরং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এমন সিদ্ধান্তই জারি করছে।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি বর্তমান শাসনব্যবস্থার স্বার্থে কাজ করছেন, যার ফলে শেয়ারবাজার ধ্বংসের মুখে পড়ছে। তারা সতর্ক করে বলেন, যদি বিএসইসি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
সূচক ও লেনদেনের চিত্র:
শনিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮.০১ পয়েন্ট কমে ৪,৮৯৯.৯২ পয়েন্টে নেমে আসে। এদিন ডিএসইএস ১৬.৬০ পয়েন্ট কমে ১,০২২.৬০ পয়েন্টে, আর ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৮১ পয়েন্ট কমে ১,৯২৮.৭৯ পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
মোট ৩৯০টি প্রতিষ্ঠান এদিন লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৩৪টির দর বেড়েছে, ৩২৯টির দর কমেছে, আর ২৭টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
ডিএসইতে মোট ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ৪১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার তুলনায় ১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কম।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২২ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। আগেরদিন এ লেনদেন ছিল ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
সিএসইতে ১৫৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশগ্রহণে ৩৬টির দর বেড়েছে, ১১৪টির কমেছে, এবং ৫টির অপরিবর্তিত ছিল।
সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৬.০৬ পয়েন্ট কমে ১৩,৯৫৮.৫২ পয়েন্টে নেমে আসে। আগের দিন সূচকটি কমেছিল ৭০.১২ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুত বাজারবান্ধব নীতিতে না ফিরে আসে, তবে দেশের পুঁজিবাজার আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে।


