ওয়েবিনারে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন

‘বিনিয়োকারীসহ সব পক্ষের আস্থা বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে’

সময়: মঙ্গলবার, জুলাই ২৮, ২০২০ ৫:৩৬:৪৭ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে বিনিয়োকারীসহ সব পক্ষের আস্থা বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি। এ লক্ষ্যে নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেছেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড আয়োজিত সৃজনশীল আইডিয়া ও আগামী দিনের পুঁজিবাজার শিরোনামের এক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।

বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বৃদ্ধি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা ও সঠিক সময়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ওই লভ্যাংশ বিতরণ, নিরীক্ষার মান উন্নয়ন, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন্যুনতম শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করা এবং বাজারে ভালো কোম্পানির আইপিওকে উৎসাহ দিতে প্রক্রিয়া সহজ করা ও সময় কমানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক জেয়াদ রহমান ও সিটি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন।

ওয়েবিনারে ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ৪৫ কোম্পানির পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের ( Sponsor) ন্যুনতম শেয়ার নেই। তাদেরকে চিঠি দিয়ে কোটা পূরণ করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে এর জন্য কিছটা সময় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ন্যুনতম শেয়ার ধারণের শর্ত তাদেরকে পূরণ করতেই হবে।

তিনি বলেন, একটি কোম্পানিতে পরিচালকদের ন্যুনতম শেয়ার না থাকলে ওই কোম্পানির প্রতি তাদের দরদ থাকে না, দায়বদ্ধতা থাকে না। তখন তারা কোম্পানি পরিচালনায় মনোযোগী হন না। অন্যভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তিনি আরও বলেন, অনেক কোম্পানি নিয়মিত শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয় না। অথচ অনেক বিনিয়োগকারী লভ্যাংশের বিষয়টি মাথায় রেখে বিনিয়োগ করেন। সারাবছর অপেক্ষা করেন লভ্যাংশের জন্য। কোনো কোনো কোম্পানি আবার লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা সময়মতো বিতরণ করেন না। এই ধরনের কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি এ ধরনের একটি কোম্পানির পরিচালকদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভাল কোম্পানিগুলো যাতে বাজারে আসতে উৎসাহী হয়, তার পরিবেশ সৃষ্টিরও চেষ্টা চলছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়কর (Corporate Tax) কমানোর বিষয় এর মধ্যে আছে। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে বিএসইসি। এই তথ্য জানিয়ে ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আইপিও আবেদনের পর কোনো অসঙ্গতি নজরে এলে বা কোনো কিছুর ব্যাখ্যা দরকার পড়লে কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে তা জানানো হয়। বর্তমানে বিএসইসিও এই চিঠি দেয়; আবার স্টক এক্সচেঞ্জও দেয়। এতেও সময় বেশি লাগে। যে কোনো একটি পক্ষকে এই দায়িত্ব নিতে হবে।

নিরীক্ষার মান বৃদ্ধিসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে অনিয়ম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম বা ঘটনার পরে ওই তথ্য বিএসইসির নজরে আসে। তাতে কমিশন সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করে থাকে। কিন্তু এটি কার্যকর সমাধান নয়। কারণ ফাইন (জরিমানা) অনেকের কাছেই ফাইন (Fine )। কিন্তু সবার জন্য নয়। তিনি মূলত অনিয়মকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করেন। কারণ বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, বড় অপরাধ বা কোটি টাকার কারসাজি করে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে গেছেন অপরাধীরা।

আগামী দিনে আইপিওর সব লটারি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে আয়োজন, বার্ষিক সাধারণ সভায় ই-ভোটিং এর ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক বাইব্যাক ব্যবস্থা প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, অনেক কোম্পানি আইপিওতে আসার আগে অনেক ভাল আর্থিক চিত্র দেখায়। বাজারে আসার পর প্রথমদিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ৪০/৫০ টাকা হয়ে যায়। কিন্তু পরে সেগুলোর দাম নেমে আসে অভিহিত মূল্যের (Face Value) নিচে। কোনো কোনো শেয়ারের দাম ৩/৪ টাকাও আছে। তাই এ ধরনের কোম্পানির উদ্যোক্তাদেরকে শেয়ার কিনে নিতে বাধ্য করা উচিত।

তিনি বলেন, বাজারে গতি ফেরানো ও লেনদেন বাড়ানো খুবই জরুরি। বর্তমান লেনদেনের পরিমাণ দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক-কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব নয়। দৈনিক গড় লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা না হলে ডিএসইর পক্ষেই ব্রেকইভেনে থাকতে পারবে না।

তিনি ইউনিলিভার, নেসলে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডসহ বিদেশী কোম্পানি এবং স্থানীয় ভাল কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। কোম্পানিগুলোর বাজারে আসার পথে বিদ্যমান সব বাধা অপসারণের কথা বলেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক কম। তাই আইপিওতে আসার প্রক্রিয়া সহজ না হলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে না এসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের প্রয়োজন মেটাবে।

আগামী তিন মাসের মধ্যে অল্টারনেটিভ বোর্ড চালু হবে বলে জানান কাজী ছানাউল হক।

তিনি বলেন, ছোট ছোট অনেক ভাল কোম্পানি আছে। আইসিবি ইএএফ তহবিল থেকে প্রায় এক হাজার কোম্পানিকে অর্থায়ন করেছে, যেগুলোর মধ্যে অনেকেই বেশ ভাল করেছে। এসব কোম্পানিকে অল্টারনেটিভ বোর্ডে নিয়ে এলে বাজারে লেনদেন বাড়বে।

ডিবিএ পরিচালক জেয়াদ রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে কিছু কোম্পানি বাছাই করে ওয়াচলিস্ট তৈরি করে বিশেষভাবে মনিটর করার পরামর্শ দেন। যদি কোনো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অযোগ্যতা বা অনিয়মের কারণে কোম্পানির পারফরম্যান্স খারাপ মনে হলে ওই কোম্পানিতে প্রশাসক বাসানোর আহ্বান জানান তিনি।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৯৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged