ব্যাংকগুলো একযোগে বিনিয়োগ শুরু করলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে

সময়: রবিবার, মার্চ ১৫, ২০২০ ২:৪০:৫৭ পূর্বাহ্ণ


সাইফুল শুভ : বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া বিশেষ তহবিলের অর্থ যদি ব্যাংকগুলো একযোগে বিনিয়োগ শুরু করে তাহলে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার তহবিল প্রদানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ ব্যাংক এখনো ফান্ড গঠন করতে পারেনি। এজন্য সবগুলো তফসিলি ব্যাংককে একযোগে বিনিয়োগে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সার্কুলার জারির এক মাসের মাথায় গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তফসিলি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে তহবিল গঠনের অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ তহবিল এক মাসেও কোন ব্যাংক গঠন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এর পরপরই বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ৬ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা করে মোট এক হাজার ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছেÑ সোনালি ব্যাংক লিমেটেড, রূপালি ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক লিমেটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড ও দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড।

এছাড়া ফান্ড গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে- ব্যাংক এশিয়া লিমেটেড, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড , মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এবং অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়া এ সপ্তাহে বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছে আরও ৫ ব্যাংক।

এদিকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলো গত একমাস যে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেÑ তা যেন ভবিষ্যতে আর না হয়। সবগুলো ব্যাংক সম্মিলিতভাবে বিনিয়োগে এলে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে। আর বর্তমানে শেয়ারের যে দরÑ তাতে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক মো. রকিবুর রহমান দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকগুলো এতদিন যে নিরবতা পালন করেছে সেটি আর উল্লেখ করতে চাই না। আশা করি এখন থেকে তারা আর নিরব থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য কোনো শর্ত ছাড়াই ৫ বছরের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে বাজারকে সহায়তা করবেÑএটিই আমার প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকগুলো যদি পরিপক্কভাবে (মেচিউরড) বিনিয়োগ করেÑ তাহলে বাজারের অবস্থা পরিবর্তিত হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আসতে হবে। যদি একটু দর বাড়তেই শেয়ার ছেড়ে দেয়Ñ তাহলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এই মূর্হূতে ডিএসই’র প্রধান সূচক থাকার কথা ছিল অন্তত ১০ হাজার পয়েন্টে। সেখানে সূচক চার হাজারে। তাই ব্যাংকগুলোর দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার দিকে যাবে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। অন্যদিকে সুদের হারও কমে যাচ্ছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারে সম্ভাবনা ভাল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, প্রত্যেকটি তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। সে হিসেবে মোট ৬০টি তফসিলি ব্যাংককে ১২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে এই ঋণ তহবিল দিবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চাইলে ৭ শতাংশ সুদ হারে ঋণ হিসেবেও দিতে পারবে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকসমূহ ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত যে কোন কার্যদিবসে রেপোর মাধ্যমে বর্ণিত ২০০ কোটি টাকার সীমার মধ্যে যে কোন অংকের তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক হতে সংগ্রহ করতে পারবে। রেপোর সুদের হার ৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকবে এবং কোন প্রকার অকশনের প্রয়োজন হবে না।

তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সাবসিডিয়ারীর ক্ষেত্রে এরূপভাবে গঠিত পোর্টফোলিও’র বাজারভিত্তিক পুন:মূল্যায়ন ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে এবং ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগ আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশ করতে হবে। পুন:মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ (ডিলার) সংশ্লিষ্ট মূল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করবে।

বিনিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, নিজ ব্যাংকের কোন শেয়ার ক্রয় করা যাবে না। অন্য কোন তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের ২ শতাংশের বেশি ক্রয় করা যাবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন অন্য কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানির মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি ক্রয় করা যাবে না। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারী কোম্পানি নয়, এরূপ মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজ (ডিলার) কর্তৃক কোন ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানির মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের ২ শতাংশের বেশি ক্রয় করা যাবে না।
মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট ইউনিটের ১০ শতাংশ এবং বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট ইউনিটের ১৫ শতাংশের বেশি ক্রয় করা যাবে না।

মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজ (ডিলার) কর্তৃক একাধিক ব্যাংক হতে এই বিশেষ তহবিলের আওতায় ঋণ গ্রহণ করলে প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথক ব্যাংক ও বিও হিসাব খুলতে হবে। ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদানুযায়ী যে কোন সময় বিও হিসাব সংশ্লিষ্ট সমুদয় তথ্য ও দলিলাদি বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে বাধ্য থাকবে’- এ মর্মে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করবে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged