নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে প্রায় ৬ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার অস্বচ্ছ বিনিয়োগের তথ্য উদঘাটন করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক থেকে অনিয়মিতভাবে ঋণ নিয়ে এই বিপুল অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাটির আশঙ্কা, এই বিনিয়োগের অর্থ ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে বাজারে কারসাজি করা হয়েছে।
বিএফআইইউ ইতিমধ্যে এই অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর কাছে। বিষয়টির গভীর তদন্তে বিএসইসি চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ব্যাংক ঋণ থেকে শেয়ারবাজারে টাকা প্রবাহ
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এক ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই ঋণের অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা একাধিক হিসাবে জমা করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ব্যবহার করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় শুধু ব্যাংক নয়, কয়েকটি ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠানকেও অপব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ, পুরো পরিকল্পনাটি ছিল সংগঠিত আর্থিক কারসাজির একটি নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে বাজারে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার, নিষিদ্ধ ও তদন্তাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ
সরকার পরিবর্তনের পর সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত (পারসনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে চিহ্নিত আটটি প্রতিষ্ঠান হলো— অ্যাবসলুট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপোলো ট্রেডিং, বেসিকমকো হোল্ডিংস, জুপিটার বিজনেস, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, ক্রিসেন্ট, ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল, এবং সেন্ট্রাল ল্যান্ড অ্যান্ড বিল্ডিং।
এসব প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও পরিচালনা পর্ষদে প্রভাব বিস্তারে জড়িত হিসেবে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের নামও তদন্তে
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে কারসাজি করেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৪২৮ কোটি টাকার জরিমানা করা হয়েছে।
এর মধ্যে অ্যাপোলো ট্রেডিং, জুপিটার বিজনেস, ক্রিসেন্ট এবং ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে পৃথকভাবে জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জরিমানা আরোপের পর কিছু প্রতিষ্ঠান পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। পরবর্তীতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আদালতে রিট দায়ের করে স্থিতাবস্থা আদায় করায় জরিমানার অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া বিলম্বিত অবস্থায় রয়েছে।
বেক্সিমকোর অবস্থান
বেক্সিমকো গ্রুপের কোনো কর্মকর্তা তদন্ত ও জরিমানা সংক্রান্ত বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রুপের বিনিয়োগসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো অতীতে সরাসরি গ্রুপ প্রধান নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে শেয়ার ও বন্ড বিক্রি করতে না পারায় গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিসঙ্কটে পড়েছে।
📊 সারসংক্ষেপ
-
বিনিয়োগের পরিমাণ: ৬,৭৯৮ কোটি টাকা
-
জড়িত প্রতিষ্ঠান: ৮টি
-
জরিমানা: ৪২৮ কোটি টাকা
-
তদন্তের সময়সীমা: ৬০ দিন
-
তদন্ত সংস্থা: বিএফআইইউ ও বিএসইসি
-
প্রধান অভিযোগ: ব্যাংক ঋণের অর্থ দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও কারসাজি