editorial

মুদ্রানীতি সংশোধনের সময়োপযোগী উদ্যোগ

সময়: মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯ ৭:৩০:৪০ অপরাহ্ণ


বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিরাজমান মন্থরভাব দূর করার জন্যই মুদ্রানীতি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক নিকট অতীতে বছরে দু’বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছিল। এবারই সারা বছরের জন্য একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বলা হয়েছিল প্রয়োজনের নিরিখে যে কোনো সময় মুদ্রানীতিতে সংশোধনী আনা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি সংশোধন সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে না বরং সার্কুলার জারির মাধ্যমে তা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হবে। প্রশ্ন হলো, হঠাৎ করেই মুদ্রানীতি সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিল কেন? সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচক ধারায় প্রবাহমান রয়েছে। যে কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চহার অর্জিত হচ্ছে। কিন্তু যে হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ঠিক সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না। অনেক দিন ধরেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার ২২-২৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় ইপ্সিত হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। এমন কি অর্জিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা টেকসই হবে, তা নিয়েও অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ প্রবাহ বাড়ানো একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই বাস্তবতাকেই মেনে নিয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত মাত্রায় নতুন বিনিয়োগ না করতে পারার কারণে ব্যাংকিং সেক্টরে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। সিডিউল ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পরিবর্তে উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে। এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বছরে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কিন্তু জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতের সার্বিক ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু বছর শেষে অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এটা চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে নির্ধারিত ঋণ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থ বছরেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। ফলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে এবারও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা হয়তো অনার্জিতই থেকে যাবে। কিন্তু এ মুহূর্তে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল রাখা এবং ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়নাধীন মুদ্রানীতি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে সেই বাস্তবতাকেই মেনে নিয়েছে। দেশের অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাগণ বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আরো ত্বরান্বিতকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারি খাত বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ সবার মনেই আশার সঞ্চার করেছে। আগামীতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি তথা বিনিয়োগ ইপ্সিত মাত্রায় বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ কার্যকর অবদান রাখবে।

Share
নিউজটি ৩১৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged