রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আর রি-ফাইন্যান্সিং নয় : অর্থমন্ত্রী

সময়: সোমবার, আগস্ট ২৬, ২০১৯ ৩:৪৩:২১ পূর্বাহ্ণ


বিশেষ প্রতিবেদক : মূলধন ঘাটতি পূরণ কিংবা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংককে আর কোনো আর্থিক সহায়তা দেবে না সরকার। আগামী বাজেট থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য এ খাতে কোনো বরাদ্দও রাখা হবে না। তবে অর্থায়ন ছাড়া ব্যংকগুলোকে অন্যান্য নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে এবং সরকার এমন কিছু করবে না, যাতে জনগণের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজেদের অর্থে চলতে হবে, জনগণকে সেবা দিয়ে মুনাফা বাড়াতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি মিলনায়তনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীকে এখন থেকে আর রি-ফাইন্যান্সিং নয়। প্রতি বছর যে রি-ফাইন্যান্সিং করতাম লস (লোকসান) কভার করার জন্য, দ্যাট অফ (তা বন্ধ)। দ্যাটস স্টোরি অব পাস্ট (এটা এখন থেকে অতীত)। আর রি-ফাইন্যান্সিং করা হবে না।’
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে। তবে আগামীতে তাদের জন্য আর কোনো বরাদ্দ রাখা হবে না। জনগণকে সেবা দিয়ে আয় করেই ব্যাংকগুলো চলতে হবে, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন নিতে হবে। ব্যাংক চারটির কর্ম এলাকা অনেক বড়, প্রায় ২৫ শতাংশ। চারটি ব্যাংককে লোকসান কমিয়ে আনার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ লাভ করতে হবে। জনগণকে সেবা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে মুনাফা বাড়াতে হবে। অর্থনীতি মানুষের জন্য। সরকার এমন কিছু করবে না, যাতে জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য চার ব্যাংককে সাতদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সাতদিন পর তারা ব্যাংকের কর্মপরিকল্পনা আমার কাছে নিয়ে আসবে। তাদের কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। শুধু অর্থায়ন ছাড়া তাদের অন্য সহায়তা দেয়া হবে।

‘এক্সিট প্ল্যান’ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাড়ছে খেলাপি ঋণ
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, নন-পারফর্মিং লোন (খেলাপি ঋণ) আমাদের এখানে কমার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, নন-পারফর্মিং লোন কমানোর জন্য যে ‘এক্সিট প্ল্যান’ দিয়েছিলাম, সেটা এখনও কার্যকর করতে পারিনি। যে কারণে খেলাপি ঋণ বেশি দেখাচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলেই খেলাপি ঋণ অনেক কমে আসবে।
তিনি বলেন, এই এক্সিট প্ল্যান এখন আদালতে আছে। এটা বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। আইনের দ্রুত সুরাহা হলেই খেলাপি ঋণের বর্তমান চিত্র থাকবে না। আইনটি বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি ঋণ পরিশোধ করছেন না।

খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে নাÑ নিজের এ দাবির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ছে -এটা আমি মানব না। যেদিন আমি বলেছিলাম, খেলাপি ঋণ বাড়বে না, সেদিনই আমি বলেছিলাম, একটা এক্সিট প্ল্যান রাখব। সেই এক্সিট প্ল্যান কার্যকর হলে বলবেন যে, বাড়ছে কি বাড়েনি। এক্সিট প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তো এখন টাকাই দিচ্ছে না। এমন কি যারা দিত, তারাও এখন দিচ্ছে না। তারা এ সুযোগ নেবে, তারা তো ব্যবসায়ী।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাড়াতাড়ি এর সুরাহা করব। সুরাহা করলে আমাদের অবস্থা আপনারাই মূল্যায়ন করতে পারবেন। তখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্রই বদলে যাবে।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে শিগগরিই সার্কুলার জারি করা হবে।’

প্রসঙ্গ : পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার সঠিকভাবে চলছে। এখানে বাইরের পুঁজি নেই। পুঁজিবাজার আমাদের ক্ষতির কারণও হবে না।’

আর্থিক খাত ঠিকভাবে চলছে
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আর্থিক খাত ঠিকভাবে চলছে। আমরা অর্থনীতির সব খাতেই ভালো করছি। দেশে রপ্তানি বাড়ছে। যারা বলছে রপ্তানি কমছে, তারা অসত্য বলছে। আমরা অবকাঠামো খাতে অনেক বিনিয়োগ করেছি। খুব শিগগির এসবের সুফল পাওয়া যাবে। এসবের সুফল পেতে থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নামবে না।’
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ, অর্থ-সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন আহমেদ, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম প্রমুখ।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৯২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged