নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের জটিলতা ও অনিয়ম দূর করে শেয়ারবাজারে সুশাসন ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বড় আইনি সংস্কারে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ঘোষণা দিয়েছেন, বাজারের সব সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিমালা একীভূত করে একটি সমন্বিত আইনি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যা শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও আস্থার নতুন যুগের সূচনা করবে।
‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “বাজারের শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষায় এই পদক্ষেপ হবে যুগান্তকারী।”
🔹 একীভূত আইনের পথে বড় পদক্ষেপ
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ জানান, বর্তমানে বাজারে ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স এবং ১৯৯৩ সালের বিএসইসি আইন—এই দুটি পৃথক আইনের পাশাপাশি রয়েছে বহু বিধিমালা ও নির্দেশিকা, যা বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
এজন্য কমিশন দুটি মূল আইন একত্রে এনে এবং সব বিধিমালা ও নির্দেশিকা এক জায়গায় সংকলন করে একটি সমন্বিত ও কার্যকর নিয়ন্ত্রক কাঠামো গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, “এই কাঠামো কার্যকর হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, বাজারের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা আরও দৃঢ় হবে।”
🔹 অতীতের অনিয়মে শাস্তির ব্যবস্থা
দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএসইসি অতীতের সব অনিয়ম, কেলেঙ্কারি ও কারসাজির তদন্তে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। চেয়ারম্যান জানান, ইতোমধ্যে ১২টি তদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যে ৭টি মামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তার ভাষায়,“আমরা প্রমাণ করেছি—কারসাজি বা অনিয়ম করে আর পার পাওয়া যাবে না।”
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্তাটি বিনিয়োগকারীদের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করছে এবং বাজারের নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির কঠোর অবস্থান প্রতিফলিত করছে।
🔹 বিচারগত জটিলতায় কিছু পদক্ষেপ আটকে
বিএসইসি চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, কিছু মামলায় আদালতের রিট ও নিষেধাজ্ঞা থাকায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা যাচ্ছে না।
তিনি উদাহরণ হিসেবে বেস্ট হোল্ডিংস ও কোয়েস্ট বিডিসি-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কথা উল্লেখ করেন।
তার ভাষায়, “ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিত না হলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন। তাই আমরা বিচার বিভাগ ও সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।”
🔹 প্রযুক্তিগত সংস্কারে নতুন দিগন্ত
শুধু আইনি নয়, প্রযুক্তিগত সংস্কারেও বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি।
চেয়ারম্যান জানান, সব ব্রোকারেজ হাউসকে সমন্বিত ট্যাম্পার-প্রুফ ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার সিস্টেমে আনা হয়েছে, যাতে গ্রাহকের তহবিল থাকে নিরাপদ ও স্বচ্ছ।
এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান ও অ্যাসেট ম্যানেজারদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা শক্তিশালী করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
🔹 স্বচ্ছতা ও আস্থার নতুন যুগের ইঙ্গিত
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “আমরা যদি প্রতারণা রোধ ও বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তবে এই বাজারের সম্ভাবনা হবে সীমাহীন।”
তার নেতৃত্বে বিএসইসি’র সর্বশেষ সংস্কার উদ্যোগগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে—
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন একটি নতুন স্বচ্ছতা, সুশাসন ও আস্থার যুগে প্রবেশ করছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজার আরও নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং বিনিয়োগবান্ধব হয়ে উঠবে।