editorial

সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হার টেকসই করতে হবে

সময়: সোমবার, জানুয়ারি ১৩, ২০২০ ৬:১৯:০৮ অপরাহ্ণ


নতুন পঞ্জিকা বছরে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগ। ১ জানুয়ারি থেকে উৎপাদনশীল খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে(১০ শতাংশের নিচে) নামিয়ে আনার কথা ছিল। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে শুধু উৎপাদনশীল খাতে নয়, সব ধরনের ঋণের সুদের হারই সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংক মালিকগণ আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার এই উদ্যোগ দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। কারণ বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার অত্যন্ত বেশি। বিশ্বে খুব কম দেশই আছে যেখানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাংলাদেশের মতো এত বেশি। ব্যাংক ঋণের সুদের হার অস্বাভাবিক বেশি হবার কারণে ব্যবসায়-বাণিজ্যের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পণ্য ও সেবা উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাগণ দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য দাবি জানাচ্ছিলেন। সরকার সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলে থাকেন,মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারই স্থির করবে সুদের হার কত হবে। এক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটাও সত্যি যে মুক্তবাজার অর্থনীতি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের উপর আরোপিত সুদের হার কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। তাই সরকারকে এখানে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কেন এত বেশি তার কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, প্রতিটি ব্যাংকেরই অপারেটিং কস্ট এবং বাহুল্য খরচ অনেক বেশি। ফলে তারা চাইলেও ঋণের সুদের হার কমাতে পারছেন না। অপারেটিং কস্ট এবং বাহুল্য খরচ বেশি হবার কারণে সার্বিকভাবে কস্ট অব ফান্ড অনেক বেশি। বর্তমানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড সোয়া ৮ শতাংশ হতে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি। এই অবস্থায় ব্যাংকের অপারেটিং কস্ট এবং কস্ট অব ফান্ড যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা না করলে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির করতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। বিশিষ্ট উদ্যোক্তা উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. মো: মাহবুব আলী দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন- এর সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এটা টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে প্রথমেই ব্যাংকগুলোর অপারেটিং কস্ট কমিযে আনতে হবে। তিনি প্রসঙ্গত বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের উদাহরণ দেন। বেসিক ব্যাংক যেভাবে তাদের কস্ট কার্টেল করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এই উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে।
বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পর যাতে কোনো ধরনের হিডেন চার্জ আরোপ করে ঋণ গ্রহণকে ব্যয়বহুল করে তুলতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর নজরদারি করতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা যাতে টেকসই হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Share
নিউজটি ৩৯৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged