এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের আইপিও স্থগিত করতে বিএসইসিতে চিঠি

সময়: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০ ৬:৪৫:৪৪ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক :  প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন পাওয়া এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের আইপিও স্থগিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি পাঠিয়েছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন। আজ ১৬ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো: রুহুল আমিন আকন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক মো: সাঈদ হোসেন খন্দকার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই ২০২০ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৩২তম সভায় এসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানিটিকে ঘিরে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে।

অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিটি বেনামে নিয়ন্ত্রণ করছে মুহা: আসলাম চৌধুরী যিনি ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির ইহুদী নেতা “মেনদি এন সাফাদী” এর সাথে হাত মিলিয়ে অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন। মুহা: আসলাম চৌধুরী রাইজিং গ্রুপের মালিক। আর এই রাইজিং গ্রুপের সিস্টার্ন কনসার্ন হলো এসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড।

এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আসলাম চৌধুরীর আপন ভাই এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমত জাহান আসলাম চৌধুরীর আপন ভাবী। কিন্তু প্রসপেক্টাসে এ সম্পর্কগুলো সুকৌশলে লুকানো হয়েছে।

মুহা: আসলাম চৌধুরী বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপী। এসোসিয়েটেড অক্সিজেন ও এর প্যারেন্ট কোম্পানি এবং সহযোগী কোম্পানিগুলো ঋণ খেলাপী হলেও প্রসপেক্টাসে বিশেষভাবে গোপন করা হয়েছে।
এছাড়াও, মুহা: আসলাম চৌধুরী তার স্ত্রী জামিলা নাজনীন মওলা ও ভাই আমজাদ চৌধুুরী দুদক মামলার আসামী। তাদের বিরুদ্ধে এবি ব্যাংক, চট্টগ্রাম শাখার এক মামলায় ৩২৫ কোটি টাকা এবং সাউথইষ্ট ব্যাংক, হালিশহর, চট্টগ্রাম শাখায় ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাৎয়ের মামলা রয়েছে। এই গ্রুপ ও সিস্টার্ন কনসার্নগুলোয় বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ হলেও প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এসোসিয়েটেড অক্সিজেন কোম্পানির টাকা দিয়ে আসলাম চৌধুরীর রাইজিং গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানির পরিচালন ব্যয় মেটানো হয়-যা প্রসপেক্টাসে গোপন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এই এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের অর্থের যোগান ও কর্মচারী দিয়ে ঢাকা ও সীতাকুন্ডে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াও এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

প্রসঙ্গত; এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের এই অর্থ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য ব্যয় করা হয়েছে- যা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে গোপন করা হয়েছে। সীতাকুন্ডে সরকার বিরোধী আন্দোলনে এই কোম্পানি থেকে ক্যাশ টাকা উঠিয়ে অগ্নি সন্ত্রাসী, জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিএনপি/জামায়াত-শিবিরকেও প্রচুর অর্থ দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। ওই সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তা অচল করে দেয়া হয়েছিল। এই মুহা: আসলাম চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপক্ষে সীতাকুন্ড থানায় অনেক মামলাও রয়েছে।

এদিকে এসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের প্রসপেক্টাস সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে সাজানো বলে অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানির শতভাগ আন্ডাররাইট করা প্রতিষ্ঠান এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ৯৫.২৪% শেয়ারের মালিক কাজী সাইফুর রহমান এফসিএ এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের প্রসপেক্টাসে যাবতীয় কারসাজি করেছে। এই সাইফুর রহমানের অনৈতিক কাজের জন্য বিএসইসি দীর্ঘ ৫ বছর তাকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। তাই বেনামে তিনি পুঁজিবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে কারসাজির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। যেখানে এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের মোট ইস্যুর পরিমাণ ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার, সেখানে কাজী সাইফুর রহমান একাই তার আত্মীয়-স্বজনদের নামে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারণ করছেন। প্লেসমেন্ট কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে নাটের গুরু কাজী সাইফুর রহমান।

এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো: রুহুল আমিন আকন্দ দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে জানান, এসোসিয়েটেড অক্সিজেন নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন এফআরসি তদন্ত করার উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ফ্যাক্টরী বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ কোম্পানিকে ঘিরে অসাধু চক্র পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তাই উত্থাপিত অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা বিএসইসির কাছে আবেদন করেছি।

রুহুল আমিন আকন্দ আরো জানান, সব কিছু জেনেও তথ্য গোপন করে এরকম একটি বিতর্কিত ইস্যু পুঁজিবাজারে আনার জন্য ইস্যু ম্যানেজার বিডি ফিন্যান্স ক্যাপিটাল হোল্ডিংস লিমিটেড এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরুণ প্রসাদ পাল এর বিরুদ্ধেও তদন্ত করার জন্য আমরা চিঠিতে বলেছি। আর তদন্তের আগ পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিও কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থগিত করে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণে বর্তমান কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অবিচল আস্থা বজায় রাখবে বিনিয়োগকারীরা সেই প্রত্যাশা করছে বলে জানান তিনি।

 

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

 

Share
নিউজটি ১৮০৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged