বিএসইসি-ডিএসই-ডিবিএ বৈঠক

ডিএসই-কে ‘আইপিও বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ গঠনের নির্দেশ

সময়: শনিবার, অক্টোবর ২৬, ২০১৯ ১:৪৫:২০ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে আসা কোম্পানি অনুমোদনে কঠোর হচ্ছে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে এক ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন আইপিও প্রস্তাব পর্যবেক্ষণে ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’ (ডিএসই)-কে দেশের শীর্ষস্থানীয় অডিট ফার্মগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

বৃহস্পতিবার ডিএসই ও ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর সঙ্গে বিএসইসি’র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে বিএসইসি’র কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা, খোন্দকার কামালুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, সাইফুর রহমান, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ডিএসই’র পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, শরীফ আতাউর রহমান, মিনহাজ মান্নান ইমন, মো. হানিফ ভূইয়া ও স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক মাসুদুর রহমান এবং ডিএসই ব্রোকারের্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ডিএসই ও ডিবিএ’র পক্ষ থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। এ সময় বিএসইসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এসব অনিয়মের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করছে কমিশন। এখন থেকে কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদনে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ এবং কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিএসইসি আইপিওর বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বলেছে। এ লক্ষ্যে অচিরেই দেশের শীর্ষস্থানীয় অডিট ফার্মগুলোর সমন্বয়ে ডিএসই একটি ‘আইপিও এক্সপার্ট প্যানেল’ গঠন করবে। আইপিও-তে আসার জন্য ডিএসই-তে জমাকৃত প্রসপেক্টাসসমূহ এই প্যানেলের কাছে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। তাদের প্রদানকৃত পর্যবেক্ষণসমূহ যাচাইপূর্বক বিএসইসি আইপিও’র চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করবে। এছাড়াও ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ কোনো প্রসপেক্টাসে অসংগতি বা সন্দেহজনক তথ্য পেলে তা তাৎক্ষনিকভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিএসইসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে ডিএসই তদন্ত করতে পারবে। প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিশন তদন্তের অনুমোদন দেবে বলে জানান এই পরিচালক।

বৈঠকে ডিএসই’র পরিচালকরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, বাজারের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন । এ সময় ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে কমিশন বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি ও ডিএসই একযোগে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে।

মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাজারে এখন বিনিয়োগাকরীদের মধ্যে শুধু হাহাকার, বাজারে অব্যাহত পতনে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আইপিও-তে আসা কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের উপর চূড়ান্তভাবে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে বিনিয়োগকারীরা। আইপিও-তে আসার আগে প্রসপেক্টাসে যে তথ্য উপাত্ত ছিল, তালিকাভুক্তির পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ডিএসইর-ডিবিএ’র সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে একটি ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বেশ কিছু প্রস্তাবনা কমিশনকে দেয়া হয়েছে। কমিশনও বাজার উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে বাজারে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবে। বেঠকে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত হাতে থাকা কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কঠিন ও কঠোরতর হওয়ার জন্য ডিএসই অনুরোধ জানায়। আইপিওর অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমিশন আরও কঠোর হবে বলে আশ্বাস দেন। রাইট শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমিশন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে

জানা গেছে, বেশ কয়েকজন পরিচালক কমিশনকে জানান, আইপিও’র কর্মকাণ্ড কিছুসংখ্যক ইস্যু ম্যানেজার ও অডিট ফার্মের বৃত্তে আটকে আছে। যা বাজারের জন্য সুস্থ লক্ষণ নয়। বর্তমানে পঞ্চাশেরও অধিক মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সাইত্রিশটি নিবন্ধিত অডিট ফার্ম থাকা সত্ত্বেও হাতে গোনা কয়েকটি ফার্মই আইপিও’র কাজ করছে।

এর জবাবে কমিশন জানায়, নিবন্ধিত থাকা সত্ত্বেও যারা আইপিও আনতে পারছে না তাদেরকে সতর্ক করা হবে, প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন অডিট ফার্মের ওয়ার্কিং পার্টনারের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে।

নতুন আইপিও’র লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথম দিন ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় দিন তার ওপর ৫০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপের জন্য প্রস্তাব করেছে ডিএসই। তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবে লেনদেন হবে। এবিষয়ে কমিশন পরবর্তী আইপিও থেকে এ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এছাড়া আইপিও-তে আসা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও প্লেসমেন্টধারী যদি একই ব্যক্তি হয়, সেক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে ১ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর লক ইন আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে বিগত দিনে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে ভালো লভ্যাংশ দেবে। ভালো লভ্যাংশ দিলে বাজার এমনিতে ভালো হবে, এ জন্য কোনো প্রণোদনা দিতে হবে না। তাই বাজারে আইপিও’র মাধ্যমে যাতে ভালো কোম্পানি আসে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কমিশনকে জানানো হয়েছে। কমিশনও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৫২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged