‘ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট প্রবিধানমালা ২০১৯’-এর খসড়া

বীমার কর্পোরেট এজেন্ট হবেন পর্ষদ কর্তৃক মনোনীত ব্যাংকার

সময়: সোমবার, অক্টোবর ২৮, ২০১৯ ১০:১৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : বীমা খাতে করপোরেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক মনোনীত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চাকরিরত এক বা একাধিক কর্মকর্তা এই প্রবিধানের অধীনে কাজ জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত হবেন। যিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ বীমা একাডেমির নির্ধারিত পরীক্ষায় পাস করে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এমন শর্ত রেখে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টের লাইসেন্স প্রদান প্রবিধানমালা ২০১৯’- র খসড়া তৈরি করেছে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ)।

এরই মধ্যে খসড়া প্রবিধানমালাটির ওপর মতামত চেয়ে তা পাঠানো হয়েছে দেশের সব বীমা কোম্পানিতে। খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনের তাগিদে এই নির্দেশনার সংশোধন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে আইডিআরএ। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ প্রবিধানমালার কোন কোন বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান, নির্দেশনা বা গাইড লাইন জারি করতে পারবে।

বীমা খাতের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, বিশ্বের বহু দেশে ব্যাংকাস্যুরেন্সের প্রচলন রয়েছে। আমাদের বীমা খাতের জন্য এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এ দেশে অনেকেই একই সঙ্গে একাধিক ব্যাংক ও বীমার পরিচালক। তাই এক্ষেত্রে পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা পাইয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধের কোন নির্দেশনা প্রবিধানমালায় দেয়া নেই।

অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি স্বীকার করে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আমরা খাত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছি। খসড়া প্রবিধানমালাটি সংশোধন বা সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। তবে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কথা বলা হচ্ছে, তা প্রতিরোধের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরেও বর্তায়। এক্ষেত্রে আইডিআর-এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও নজরদারি বাড়াতে হবে।’

খসড়ায় লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকাস্যুরেন্সের প্রাতিষ্ঠানিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে হলে নির্ধারিত ফর্মের সাথে ২ হাজার টাকাসহ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতার রেকর্ড, আবেদনকারীর পরিচালনা পর্ষদের কার্য সম্পাদনের রেকর্ড, বিশেষ করে আবেদনকারীর প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট নির্বাহীর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাচাই করবে আইডিআরএ। পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় শাখাসহ আবেদনকারীর সংস্থার পরিকল্পিত অবকাঠামো কার্যকরভাবে ব্যবসা করতে পারবে কিনা সে বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদন্ত করার পর যোগ্য বিবেচিত হলে আবেদনকারীকে লাইসেন্স দেয়া হবে। প্রদত্ত লাইসেন্সটি ৩ বছরের জন্য বৈধ হবে। একই লাইসেন্স পরবর্তীতে আরও ৩ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। প্রত্যেক ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট ১ হাজার টাকা প্রদান সাপেক্ষে নির্ধারিত ফরমে নবায়নের জন্য আবেদন করবে এবং লাইসেন্সের মেয়াদ পূর্তির ৩০ দিন পূর্বে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। কোন লাইসেন্স স্থগিত করা হলে কর্তৃপক্ষের কাছে ১ হাজার টাকা ফিসহ আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে পুনরায় লাইসেন্স প্রদান করা যাবে।

লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিলের বিষয়ে বলা হয়েছে, লাইসেন্সের শর্তগুলো মেনে চলতে ব্যর্থ হলে বা আচরণবিধি না মানলে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করা হবে। এছাড়াও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইনসহ বীমা সংক্রান্ত বিধি বিধান না মানলে, কর্তৃপক্ষের চাওয়া তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে, ভুল তথ্য প্রদান করলে, তথ্য গোপন এবং রিপোর্ট রিটার্ন প্রদানে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন কাজে সহযোগিতা না করলে, বীমা গ্রাহকের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোন কাজ করা হলেও লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করা হবে। শুধু তাই নয়, লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে হলে ২১ দিনের একটি নোটিশ দিতে হবে। এবং শুনানী ছাড়া লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করা যাবে না। লাইসেন্স বাতিল হলে বীমা কোম্পানি তাৎক্ষণিকভাবে বীমা গ্রাহককে অবহিত করবে এবং নতুন এজেন্টের ঠিকানা দিতে হবে।

প্রধান ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট নির্বাহীর যোগ্যতায় বলা হয়েছে, চীফ ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট এক্সিকিউটিভকে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট দ্বারা স্নাতক বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের সর্বনিম্ন যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির অ্যাসোসিয়েট বা ফেলো, ইন্সটিটিউট অফ চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টন অফ বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েট বা ফেলো বা ইনস্টিটিউট অফ চাটার্ড সেক্রেটারির অ্যাসোসিয়েট বা ফেলো হতে হবে। এছাড়া সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোন ইনস্টিটিউশন বা ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার্স সম্পন্ন ব্যক্তিও চিফ ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট হতে পারবেন।

খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, কোন ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট একাধিক লাইফ বা একাধিক নন লাইফ বীমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। বীমা কোম্পানিকে এজেন্টের সাথে চুক্তির পূর্বে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে এবং ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। তবে কোন বীমা কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে একাধিক এজেন্টের সাথে যুক্ত হতে পারবে।

ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্টকে পারিশ্রমিক প্রদানের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কমিশনের হারের সীমার মধ্যে থেকে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন পূর্বক ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্টকে পারিশ্রমিক প্রদান করবে বীমা কোম্পানি। লাইফ এবং নন লাইফ বীমা ব্যবসায় কমিশন এমপ্লয়ার অব এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক কমিশন বা পারিশ্রমিক প্রাপ্য হবেন। কোন ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট পরিকল্পনা বিক্রির জন্য ফি, কমিশন, প্রণোদনা বা অর্থ কোন ব্যক্তিকে প্রদান করতে পারবে না। ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট বীমা গ্রাহকের নিকট থেকে কোন সার্ভিস ফি, প্রসেসিং ফি, ব্যবস্থাপনা মাশুল বা অন্য কোন প্রকার মাশুল দাবি করতে পারবে না।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৮৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged