অনুপ সর্বজ্ঞ : ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি) প্রবিধানমালা ২০১২’ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ সালে। যেখানে প্রতি অধিবেশনের জন্য কমিটির সদস্যদের পারিশ্রমিক ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে সংশোধিত প্রবিধানমালায় সদস্যদের পারিশ্রমিক ৭ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত টাকার পরিমাণ প্রতিবছর যৌক্তিকভাবে বাড়াতে পারবেন এবং তা সরকারকে অবহিত করবেন।
এ সংশোধনীর পক্ষে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে, তা হলো- কমিটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রবিধানমালায় এ সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণের জন্যও এ সংশোধনী জরুরী। এক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ উল্লেখ না করে তা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর রাখাই যৌক্তিক হবে। কারণ আজকের পরিস্থিতি বিবেচনায় যে টাকা নির্ধারণ করা হবে, কিছুদিন পরে তা আবার অপ্রতুল হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রবিধানমালা বারবার সংশোধনে জটিলতা সৃষ্টি হবে। নিয়ম অনুযায়ী কমিটি করতে গেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, বীমা কোম্পানি ও গ্রাহকের মধ্যে উদ্ভূত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কর্তৃপক্ষ একজন চেয়ারম্যান, পদাধিকার বলে সদস্য ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য তিনজন সদস্যের সমন্বয়ে ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ নামে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করবে। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত পদাধিকারবলে সদস্য কমিটিকে সহায়তা করবেন। তবে তার কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।
চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, মেয়াদ, পদত্যাগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নির্ধারিত প্রবিধানের অধীনে গঠিত কমিটিতে চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা জেলা জজ হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। যার বীমা আইনসহ বিভিন্ন আইনের বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। পদাধিকারবলে সদস্যসহ অন্য তিনজন সদস্য হবেন কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় বীমা বিজ্ঞান, একচ্যুয়ারিয়াল বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইন বা হিসাব বিজ্ঞানে ব্যবহারিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তি। কোন ব্যক্তি দেউলিয়া ঘোষিত হলে বা কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নৈতিক স্থলনজনিত কোনো অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য হবেন না বা সদস্যপদে বহাল থাকবেন না।
কর্তৃপক্ষের পদাধিকার বলে সদস্য ব্যতীত চেয়ারম্যান এবং অন্য তিনজন সদস্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত শর্ত মোতাবেক নিয়োগের তারিখ হতে তিন বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং মেয়াদ শেষে পরবর্তী এক বা একাধিক মেয়াদের জন্যও পুনরায় নিয়োগপ্রাপ্তির যোগ্য হবেন।
জানা গেছে, বর্তমানে আইডিআরএ’র বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম। পদাধিকার বলে পারিশ্রমিক ছাড়াই কমিটিতে রয়েছেন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ। এছাড়া নির্ধারিত পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কমিটির আরও দুজন সদস্য হলেন একচ্যুয়ারি সোহরাব উদ্দিন, চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মসিহ মালিক চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘আমি পদাধিকার বলে পারিশ্রমিক ছাড়াই কমিটিতে আছি। তবে কমিটির অন্যান্যদের পারিশ্রমিক কত হবে Ñতা নির্ধারণ করার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যাতে প্রয়োজনের ভিত্তিতে সময়ে সময়ে তা বাড়ানোর সুযোগ থাকে। কমিটির কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যই এ সংশোধন আনা হচ্ছে’ বলে তিনি জানান।
জানা যায়, বীমা খাতে বড় অঙ্কের দাবি পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে গ্রাহকরা সরাসরি অভিযোগ করেন বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে। জীবন বীমার ক্ষেত্রে যেকোনো সংক্ষুব্ধ গ্রাহক ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বীমা দাবি নিষ্পত্তির আবেদন করতে পারবেন আইডিআরএ-তে। সাধারণ বীমার (নন-লাইফ) ক্ষেত্রে এ পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। উভয় ক্ষেত্রে দাবির পরিমাণ এর বেশি হলেই আবেদন করতে হবে বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, এ আবেদন করতে হবে ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’র চেয়ারম্যান বরাবর। তবে আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে অবশ্যই মোট বীমা দাবির ২ শতাংশ টাকা পে-অর্ডার বা ডিডি করে আইডিআরএ বরাবর জমা দিতে হবে। ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ এরপর উভয়পক্ষকে শুনানিতে ডেকে একটি সিদ্ধান্ত দেবে। ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ আইডিআরএ’র বলয়ের বাইরে এসে স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান