bangladesh bank

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে হাইকোর্টের রায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার বৈধ ও সময়সীমা বাড়লো ৯০ দিন

সময়: সোমবার, নভেম্বর ৪, ২০১৯ ৯:৩৯:৪১ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধসাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করে এর মেয়াদ ৯০ দিন বাড়িয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে সম্ভাব্য সমাধানের বিষয়ে পরামর্শ দিতে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতে ঋণ খেলাপিদের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০১২ সালের জারি করা ‘মাস্টার সার্কুলার অন লোন রিশিডিউলিং’ সংক্রান্ত সার্কুলারের বিধি নিষেধ অনুসরণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনে দেয়া রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ গতকাল রোববার এ রায় দেন।
আদালতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আজমালুল হোসেন কিউসি, শামীম খালেদ আহমেদ ও ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর পক্ষে ছিলেন শাহ মঞ্জুরুল হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
অন্যদিকে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
রায় ঘোষণার পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, কোর্ট আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন সেই রকম ৯ জন ব্যক্তিকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে, সেই কমিটি সরকারি বেসরকারি সব ব্যাংকের যে দুর্বলতা, বিশেষ করে ঋণ পরিশোধ, ঋণ অনুমোদন এবং সংগ্রহে অনিয়মসহ সব বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করবেন। সেখানে তারা এগুলো তৈরি করে কী কী উপায়ে এগুলো দূর করা যায়, এ দুরাবস্থাগুলো দূর করা যায়, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারা প্রতিবেদন দেবেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা কার্যকর করবে।
তিনি আরও বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১২ সালের ‘মাস্টার সার্কুলার অন লোন রিশিডিউলিং’ সংক্রান্ত সার্কুলার-যেটাতে বলা আছে কেউ যদি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ গ্রহণ করে পরে সে যদি ঋণ নিতে যায়, তার কাছে যে ঋণ পাবে তার ১৫ শতাংশ অর্থ দিতে হবে। এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে এবং সিআইবিতে তার নাম পাঠাতে হবে।
বিএবি’র শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আদালত কমিশন গঠনে সরকারের প্রতি কোনো নির্দেশনা দেননি। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি কমিটি করতে বলেছেন। ব্যাংক খাতে কমিটির কাজ হচ্ছে, ব্যাংকিং সেক্টরে অনিয়ম কেন হয়েছে Ñসেটি তদন্ত করে দেখে রিপোর্ট তৈরি করা।
‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্কুলার (২ শতাংশ) দিয়েছিলেন সেটি অবৈধ হয়নি বরং আরও তিন মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন ওই সার্কুলারের মেয়াদ। দুই শতাংশ জমা দিয়ে পরে লোন নিতে পারবেন। তবে পরে লোন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেটি মাস্টার সার্কুলারে উল্লেখ আছে, সেই বিধিবিধান যেন মান্য করা হয়।’
মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, এ রায়ের ফলে আমাদের মনে হয় না ব্যাংক খাতে কোনো সমস্যা আছে। এর ফলে বরং ব্যাংক খাতের আরও ভালো হবে। আদালত বলেছেন সব ব্যাংক যেন সুদকে সিঙ্গেল ডিজিটে আনে।
ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়েই বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিটির পরামর্শ নিয়ে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি যে, আজকে আদালত যে কমিটি গঠন করতে বলেছেন, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজের কাজের ইন্টারাপ্ট হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সফলভাবে কাজ করতে পারবে।
প্রসঙ্গত: গত ২৮ জুন আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠন এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সংক্রান্ত জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়।
মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবি’র করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না ও এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পরে ২৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক সিলগালা করে ঋণখেলাপিদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন।
এর মধ্যে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। এরপর রিটকারীদের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজার রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ৮ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ৮ জুলাই এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ান। তবে যারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুবিধা নেবেন তারা নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না। এছাড়া বিচারপতি জেবিএম হাসান-এর নেতৃত্বাধীন কোর্টে এ রিট মামলা শুনানি করতে বলেন।
সে আদেশ অনুসারে রিট মামলাটি উক্ত আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। রুল শুনানি অবস্থায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে আদালতের আদেশের কয়েকবার বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে রুলও জারি করেন।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৫৩৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged