নাজমুল ইসলাম ফারুক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য প্রায়ই ভুল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আর ভুলে ভরা এসব তথ্য বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে। এসব তথ্য সঠিক বিবেচনায় বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এক শ্রেণির চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে ডিএসই’র ওয়েবসাইটে এসব ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এসব কারণে ডিএসই-কে একাধিকবার ‘ব্যর্থ স্টক এক্সচেঞ্জ’ বলে তিরস্কার করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার টপটেন গেইনারে উঠে আসা কোম্পানিগুলোর তালিকা করেছে ডিএসই। এ তালিকায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বেড়ে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে ‘এমএল ডাইং লিমিটেড’। ডিএসই’র তৈরিকৃত তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক’। গেইনার তালিকায় কোম্পানির দর আগের দিনের চেয়ে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে বলে তথ্য দেয়া হয়েছে। অথচ শাহজালাল ব্যাংকের প্রোফাইলের তথ্যে দেয়া হয়েছে- কোম্পানির দর আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এই হিসেবে কোম্পানিটি গেইনার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রাখার তথ্যটি ভুল। এ তালিকায় প্রায় সময়ই ভুল তথ্য দিয়ে থাকে ডিএসই।
এদিকে, গেল সপ্তাহে ‘বি’, ‘জেড’, ‘এন’, এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য করা টপটেন গেইনার তালিকায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ দর বেড়ে তৃতীয় স্থানে ‘এন’ ক্যাটাগরির সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ দর বেড়ে সালভো কেমিক্যালস চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। অথচ ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ দর বাড়ার পরও ‘জেড’ ক্যাটাগরির নর্দার্ন জুটের নাম এ তালিকায় নেই। তথ্য হালনাগাদের এসব ভুলে ভরা তথ্য প্রায় সময়ই ডিএসই-তে লক্ষ্য করা যায়। এসব তথ্য বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে। একইসঙ্গে তাদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ডিএসই’র রিরুদ্ধে নানা তথ্য গোপন করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে ‘রহিমা ফুড’-এর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য একদিন পর প্রকাশ করায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয়েছে ডিএসই’র অসাধু একটি চক্র। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে ‘গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স’-এর শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেয়ার ফলে কোম্পানিটির শেয়ার দরে বেশ উল্লম্ফন হয়েছে। পরবর্তীতে সঠিক তথ্য দেয়ায় কোম্পানিটির শেয়ার দরে বড় ধরনের পতন ঘটে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
অন্যদিকে, গত জুনে ডিএসই ‘এমএল ডাইং’-এর শেয়ার ধারন সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তা ঠিক করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু গেইনার বা লুজার তালিকা নয়, আগেও ডিএসই বিভিন্ন তথ্য সময়মতো প্রকাশ করেনি। তাছাড়া তথ্য গোপন করে পরে প্রকাশ করার মত নজিরও ডিএসই-তে রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এসব কারণে ডিএসই-কে একাধিকবার ‘ব্যর্থ’ বলেও তিরস্কার করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়ার বিপরীতে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের ক্ষতি করছে। ডিএসই’র যে বিভাগ এসব তথ্য হালনাগাদ করে বিএসইসি তাদের উপর নজর রাখা উচিত। একই সঙ্গে ভুলতথ্য হালনাগাদের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজের বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে ‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক মহসিন মিয়া ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা। এর মধ্যে ডিএসইর প্রকাশিত ভুল তথ্যে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। ডিএসই থেকে প্রায়সময় ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে দেখা যায়। বার বার তথ্যগত ভুলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এসব ভুল তথ্য যারা উপস্থাপন করছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
ডিএসই’র চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) একেএম জিয়াউল হক খান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’ কে বলেন, “ডিএসই’র দৈনিক হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করে থাকে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে যদি কোনো ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়ে থাকে, তাহলে সে বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।”
এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) আব্দুল মতিন পাটোয়ারী-এর সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগোযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান