নুরুজ্জামান তানিম/নাজমুল ইসলাম ফারুক :
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলসের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। নানা অনিয়ম, আইন লঙ্ঘন, লোকসানসহ সার্বিক চিত্রে ডুবতে বসেছে কোম্পানিটি। কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই ’১৮-মার্চ ’১৯) অ-নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য মতে, দিন দিন উৎপাদন কমার কারণে প্রতিযোগিতার বাজারও হারাতে বসেছে কোম্পানিটি। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির মুনাফায়। গত তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান, করপরবর্তী নিট লোকসান, নেতিবাচক সম্পদ মূল্য, নেতিবাচক শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি এবং নেতিবাচক ক্যাশ ফ্লো কোম্পানিটিকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
এদিকে কোম্পানিটির আর্থিক সকল সূচক নেতিবাচক ধারায় থাকলেও শেয়ার দরে ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ নড়েচড়ে বসেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে। আর এগুলোর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে ডিএসই।
কোম্পানিটির অ-নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩১ মার্চ ২০১৯ সমাপ্ত (জুলাই-মার্চ) তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ২১ পয়সা। করপরবর্তী লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ৩৫ টাকা ৯০ পয়সা নেতিবাচক। শেয়ারহোল্ডার নেগেটিভ ইক্যুইটি রয়েছে ২ কোটি ৭১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর শেয়ারপ্রতি নেগেটিভ নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ১ টাকা ৪৮ পয়সা। ২০১৮ সালের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৩ টাকা ১৩ পয়সা। করপরবর্তী লোকসান ছিল ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। শেয়ারপ্রতি নেগেটিভ নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ৬২ পয়সা। এছাড়া ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ৩২ টাকা ৬৯ পয়সা নেতিবাচক। শেয়ারহোল্ডার নেগেটিভ ইক্যুইটি ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে ডিএসই। এ ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তা ব্যাখ্যা চেয়েছে সংস্থাটি।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ৩৪ এর ৮ অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক বিবরণী তৈরির সময় সিলেক্টেড এক্সপ্ল্যানেটরি নোট দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি তা পারিপালন করেনি। ফলে কোম্পানিটি আইএএস ৩৪ এর প্যারাগ্রাফ ৮ লঙ্ঘণ করেছে।
একইসঙ্গে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য এবং নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো গণনার হিসাব ব্যাখ্যা দেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে ক্যাশ ফ্লো হিসাব ডাইরেক্স ম্যাথোড পদ্ধতিতে প্রণয়ন করেছে। তবে এ পদ্ধতিতে হিসাব প্রণয়ন করা হলেও নেট ইনকামের সমন্বয় করেনি। কিন্তু কোম্পানিটি তা পরিপালন না করায় বিএসইসি’র শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনে এসব কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কেন বিষয়টি উল্লেখ করেনি তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিএসই।
আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুলামিয়া কটনের কোম্পানি সচিব মো. আবদুস সালাম ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ডিএসই ব্যাখ্যা চেয়েছে। শিগগিরই সেগুলোর জবাব দেয়া হবে। এ বিষয়ে কোম্পানি প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে কোম্পানিটি যে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে ডিএসই সংশয় প্রকাশ করেছে Ñতা সঠিক নয়। বছরের পুরো হিসাব গুছানোর পর বলতে পারবো আমাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কেমন।’
আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বিএসইসির শর্ত মানা হয়নি এবং আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসরণ করা হয়নি কেনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জুনে দুলামিয়া কটনের হিসাব বছর শেষ হয়েছে। হিসাব বছর শেষে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে বলতে পারবো।’
তবে শর্ত পরিপালন না করার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা হয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘এসব লোকসানি কোম্পানি নামমাত্র ডিএসইতে তালিকাভুক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানিগুলোর সার্বিক আর্থিক অবস্থা তালিকাভুক্ত থাকার অনুকূলে নয়। কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ডিএসইর।’
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান