অনুপ সর্বজ্ঞ : প্রতি বছর পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাবদ কত টাকা বিদেশে যাচ্ছে এর হিসাব দিতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোকে। বিদেশে অর্থ প্রেরণের বিষয়টি অনুমোদনের পাশাপাশি প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ) বরাবর এ হিসাব দিতে হবে। প্রথমবারের মতো প্রণীত বীমা কোম্পানিগুলোর বিদেশে পুনঃবীমা সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়ায় এ বিধান রাখা হয়েছে। বিশ্বের ১শ’টি দেশের পুনঃবীমা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন পর্যালোচনা করে খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে বলে ‘আইডিআরএ’ সূত্রে জানা যায়।
জানা যায়, বর্তমানে কোনো নীতিমালা ছাড়াই এসবিসি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাবদ প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডও সংরক্ষণ করে না আইডিআরএ বা বাংলাদেশ ব্যাংক। এমতাবস্থায় পুনঃবীমার আড়ালে অর্থ পাচার প্রতিরোধে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খসড়া পুনঃবীমা সংক্রান্ত নীতিমালার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘বিদেশে পুনঃবীমা সংক্রান্ত নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা এখনো চূড়ান্ত নয়। এটা নিয়ে আমরা শিগগিরই স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবো।’
একই প্রসঙ্গে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, ‘খসড়া নীতিমালাটি আমরা এখনো পাইনি। তাই এখনই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এ দেশে পুনঃবীমা বিশেষজ্ঞ অনেকেই আছেন। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যদি এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়, তাহলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।’
এসবিসি’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাঠিয়েছে পুনঃবীমার প্রিমিয়াম বাবদ। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৩১৬ কোটি ২১ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ২৭৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ৩১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ২৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ২০১৭ সালে পাঠানো হয়েছে ৩৪৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। গত ২০১৮ সালের হিসাব এখন পর্যন্ত তৈরি না হলেও আলোচ্য বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাবদ পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে এসবিসি।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি) ও বেসরকারি বীমা কোম্পানি উভয়কেই পুনঃবীমা ব্যবসার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন আইডিআরএতে দাখিল করতে হবে। এছাড়া পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাবদ যে পরিমাণ অর্থই বিদেশে পাঠানো হোক না কেন, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে তার অনুমোদন নিতে হবে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত রেকর্ড সংরক্ষণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও পুনঃবীমা সংক্রান্ত কাজে কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের তথ্য ত্রিমাসিক ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশি পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবে। এছাড়া তাদের বাংলাদেশ শাখার ব্যবসায়িক তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আইডিআরএতে জমা দিতে হবে।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিধি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়েই কোনো পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান এ দেশে ব্যবসা করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাকে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) প্রক্রিয়াও অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানের শেষ পাঁচ বছরের ব্যবসায়িক তথ্য ও আর্থিক সক্ষমতার সনদ আইডিআরএ জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বিদেশি পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), হিসাব রক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করবে আইডিআরএ। এছাড়াও প্রস্তাবিত পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বের আর কোন কোন দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে তার একটি তালিকা আইডিআরএ দিতে হবে ।
খসড়ায় পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রেটিং ও আর্থিক সক্ষমতা বিচার করেই দেশীয় কোম্পানিগুলোকে চুক্তিবদ্ধ হবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দাবি পরিশোধে যে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলে পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি উভয়কেই তা লিখিতভাবে জানাতে হবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর।
খসড়া নীতিমালায় বিদেশি পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বেশ কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে। যেমন- এদেশে ব্যবসা করলেও তাদের কোনো ধরনের জামানত রাখতে হবে না। এছাড়া খসড়া নীতিমালায় অর্জিত প্রিমিয়াম আয় থেকে এ দেশে বিনিয়োগের কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।
জানা যায়, সাধারণ বীমা করপোরেশন এদেশের একমাত্র সরকারি পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো তাদের মোট ঝুঁকির ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানে পুনঃবীমা করে। বাকি ৫০ শতাংশ ইচ্ছে করলে বিদেশে বা এসবিসিতেই পুনঃবীমা করতে পারে কোম্পানিগুলো।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান