গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামে ফ্যান তৈরির একটি কারখানায় মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। কারখানার তৃতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলেও নিচে নামার কোনো বিকল্প রাস্তা না থাকায় কর্মরত শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। দু’তলা আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিনসেড তৈরি করে কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। কারখানাটির কোনো অনুমোদন ছিল না। কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে কারখানা পরিদর্শন করে এসব তথ্য জানতে পেরেছে। এর মাত্র কয়েক দিন আগে রাজধানীসংলগ্ন কেরানীগঞ্জ এলাকায় অন্য একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকজন শ্রমিককের মৃত্যু হয়েছে। যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু এভাবে কারখানায় কাজ করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে সেটা আরো বেশি দুঃখজনক। কারণ কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলে এবং আরো কিছুটা দায়িত্বশীল হলে হয়তো এই অনাকাক্সিক্ষত অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে এতগুলো তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল। একজন শ্রমিক জীবিকা অর্জনের জন্য কারখানায় কাজ করেন। এটা যে কোনো বিচারেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা কারখানার মালিক তাদের অর্থ ভাণ্ডার পূর্ণ হয় এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে। শ্র্রমিক-কর্মচারী না থাকলে কারখানা কখনো চলতে পারে না। তাই যাদের উপর নির্ভর করে একটি কারখানা পরিচালিত হয় সেই শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে। কারাখানা আইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে। সে নির্দেশনা নানাভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে কিছুদিন হৈচৈ হয় তারপর সব আগের মতোই হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ঘটনাত্তোর কোনো কিছু নিয়ে হৈচৈ করার চেয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
অগ্নি দুর্ঘটনা বা এ ধরনের অন্য কোনো দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তার পরিবারের কি অবস্থা হয় তা একমাত্র ভোক্তভুগিরাই জানেন। কোনো কিছু দিয়েই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হয় না। তারপরও বলবো, যারা অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অথবা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে অনুমোদনবিহীন কারখানা কি করে স্থাপিত হলো এবং উৎপাদন কার্য পরিচালনা করতে পারলো তা তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ফ্যান তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কিছু কথা
সময়: বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯ ৬:৩৫:৩৮ অপরাহ্ণ


