নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালকদের একটি অংশের আপত্তি সত্বেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর সাবেক এমডি কাজী সানাউল হক এর নাম চূড়ান্ত করেছে ডিএসই। তাকে ডিএসই’র এমডি পদে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে ৬ জনকে ডাকা হয় এবং ৪ জন সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এদের মধ্য থেকে ২ জনের নাম সুপারিশ করে পর্ষদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নমিনেশন অ্যান্ড রেমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)। এনআরসি’র সুপারিশ করা দু’ জন প্রার্থী হলেন- ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক এমডি কাজী সানাউল হক এবং যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি শফিকুল আলম। নিয়মানুযায়ী দু’জনের মধ্য থেকে পর্ষদ একজনের নাম চূড়ান্ত করে বিএসইসি পাঠাবে। তবে দু’ প্রার্থীর মধ্যে আইসিবি’র সাবেক এমডি কাজী সানাউল হক এর বিষয়ে ডিএসই’র একজন প্রভাবশালী পরিচালকের মৌখিক সুপারিশ করেছেন। ওই পরিচালক পর্ষদের অন্য সদস্যদেরকেও এ প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার অনুরোধ করেন। এতে গত বুধবার শুধু আলোচিত এ প্রার্থীকে গতকালের পর্ষদে সাক্ষাতকার দেয়ার জন্য ডাকা হয়। এ নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে পর্ষদে তার সাক্ষাতকার বাতিল করা হয়। গতকাল ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে দু’ প্রার্থী নিয়েই আলোচনার কথা থাকলেও তা না করে শুধু কাজী সানাউল হকের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্ষদ সভায় ১০ জন পরিচালক অংশগ্রহণ করেন,যাদের মধ্যে ৪ শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক। এদের মধ্যে ওই প্রভাবশালী পরিচালকসহ তার অনুরোধে মোট ৬ জন কাজী সানাউল হককে এমডি নিয়োগে সম্মতি দিয়েছেন। আর ৪ জন আপত্তি জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জনই শেয়ারহোল্ডার এবং একজন স্বতন্ত্র পরিচালক। পরিচালকদের একটি অংশের আপত্তির মুখেও কাজী সানাউল হক কে এমডি পদে চূড়ান্ত করে বিএসই’তে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই পর্ষদ। বিএসইসি তাকে যোগ্য মনে করলে তার অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক দিকে শেয়ারবাজারে দরপতন, অপরদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) পদ শূণ্য। এতে সংকটে পড়েছে সংস্থাটি। আর এ সংকটময় মুহুর্তে একজন বিতর্কিত লোককে এমডি নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করেছে ডিএসই।
জানা গেছে, আইসিবি’র সাবেক এমডি কাজী সানাউল হক ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির আইএসটিএলে’র সিইও ছিলেন। তার দায়িত্বরত অবস্থায় ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে তলব করেছিল। ওই সময় শেয়ার ব্যবসায় জড়িত যেসব লোক ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন তাদের ঋণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া যাকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা তাকে কয়েক কোটি টাকা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সরকারের ১৩৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার একটি খারাপ সময় পার করছে। এই মুহুর্তে ডিএসই’র এমডি হিসেবে স্বচ্ছ মানুষ দরকার, যিনি এ মন্দা সময়ে চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত এমডি’র মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১২ জানুয়ারি। এর মধ্যে এমডি নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে। অন্যথায় ডিএসই’তে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে বলে বাংলাদেশের সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এমডি নিয়োগ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই।
স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী গত অক্টোবরের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। আলোচ্য সময়ে এমডি পদে নিয়োগ দিতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে আরও ৩ মাস সময় দেয়া হয়েছে।
এমডি নিয়োগে যোগ্য লোকের খোঁজে ডিএসই তিনবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সর্বশেষ এমডি পদে যোগ্য লোকদের ডিএসই গত ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনের সময় বেধে দিয়েছে। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় আবেদন করার শেষ সময় বেধে দিয়েছিল এবং গত ৭ আগস্ট প্রথমবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ডিএসই। সেগুলোতে গত ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
এমডি নিয়োগে কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে ডিএসই। এগুলোর মধ্যে প্রার্থীর ব্যবস্থাপনা, সেলস, মার্কেটিং, পাবলিক রিলেশন, প্রডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা থাকতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে- প্রার্থীকে ব্যবস্থাপনায় ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসহ অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, গণিত বা আইনের স্নাতক হতে হবে। এছাড়া সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস,সিপিএ এর মতো পেশাগত ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে পুঁজিবাজারের উপর আন্তর্জাতিক কোনো ডিগ্রি বা অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর। তবে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তিনি আরো এক মেয়াদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। তাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মাজেদুর রহমান কে পুনঃনিয়োগের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করে ডিএসই পর্ষদ। কিন্তু বিএসইসি তা নাকচ করে দেয়ায় এমডি খুঁজতে হচ্ছে ডিএসইকে। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান