নিজস্ব প্রতিবেদক : বন্ড সুবিধায় শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে অলিরা ফ্যাশনের পণ্য আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা অলিরা ফ্যাশনের চালান আটক করে। আটককৃত পণ্য থেকে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি রোধ হয়েছে। চালানটির সব পণ্যের কায়িক পরীক্ষা শেষে গতকাল মঙ্গলবার কাস্টমস হাউস চট্টগ্রামের কাছে পাঠানো হয়। এতে এক কোটি ৭১ লাখ টাকার কিছু বেশি রাজস্ব সুরক্ষিত হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি করতে চেয়েছিল অলিরা ফ্যাশন। এটি প্রথমে গোয়েন্দাদের নজরে আসে। পরবর্তীতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে আঞ্চলিক কার্যালয়, চট্টগ্রাম অভিযান চালায়। অলিরা ফ্যাশনের চালানটি খালাসের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল সিএঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আহনাফ ট্রেড লিংক। এটি চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের এপ্রিলে অলিরা ফ্যাশন বন্ডের সুবিধায় আমদানি করে চালানটি। প্রথমে গোয়েন্দাদের কাছে সন্দেহ হওয়ায় তারা খালাস সাময়িক স্থগিত করে। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দার কাছে নিশ্চিত রাজস্ব ফাঁকির তথ্য থাকায় পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় ঘোষণা মোতাবেক রেয়ন সোল ফ্যাব ডব্লিউ-৬৩/৬৫ মোট ২৬ হাজার ৫০০ কেজির স্থলে ঘোষণাবহির্ভূতভাবে কটন মিক্সড ফেব্রিকস ২৯ হাজার ৯৪৬ কেজি আমদানি করা হয়। যা রফতানি হয় না। বরং স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। মিক্সড কটন দিয়ে সাধারণত মহিলাদের প্লাজো, ব্লাউজ ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
সাধারণত বন্ড সুবিধায় শতভাগ রফতানিমুখী পণ্য আমদানি করা হয়। পণ্যটি আবারো বিদেশে রফতানির উদ্দেশ্যে চলে যাবে। শুধু বাংলাদেশে কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করা হবে। কিন্তু অলিরা ফ্যাশন শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়েই এনেছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাতো। আর তারাও প্রচুর মুনাফা করতো।
পণ্য চালানটির শুল্কায়নযোগ্য মোট মূল্য ৯০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং শুল্ক করের পরিমাণ ৮০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। শুল্ককরাদি নিয়ে মোট এক কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৩১৬ টাকা আদায় হবে। জরিমানা ব্যতিত সরকারের এ টাকা রাজস্ব ফাঁকি রক্ষা পেল। এর বাইরেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আরো জরিমানা করতে পারে বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।
এদিকে অলিরা ফ্যাশনের রাজস্ব ফাঁকির প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার নির্ণয় করে ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ের জন্য কাস্টমস হাউজ চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা নিশ্চত করেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা ছাড়াও বন্ড লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্ড সুবিধা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বন্ড সুবিধা অপব্যবহার রোধে এনবিআর তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। এজন্য ফাঁকিবাজ বন্ড প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আমদানি পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত শুল্ক ফাঁকি রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিগত ছয় মাসে ৩৪২টি বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএকে নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। বিজিএমইএ বন্ড সুবিধা অপব্যবহারকারীদের তথ্য খতিয়ে দেখছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান