আইনের বেড়াজালে রানার অটোর শেয়ারহোল্ডার ও বিএসইসি

সময়: মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ ১০:৪২:২২ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : আইনের বেড়াজালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডাররা। কোম্পানি প্রাথমিক গণ-প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের ৪০ শতাংশ এখনো অব্যবহৃত রয়েছে। কয়েকবার প্রকল্প বদল ও বাস্তবায়নের সময় বাড়িয়ে এখন এফডিআর করতে যাচ্ছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ আবারও অনিশ্চয়তায়। এতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ক্ষুব্ধ হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
শেয়ারহোল্ডাররা বলছে, কোম্পানি তাদের মতো করে কিছু শেয়ারহোল্ডার দিয়ে অতিরিক্ত সাধারণ সভার (ইজিএম) আয়োজন করে এফডিআর করার বিষয়টি অনুমোদন করিয়ে নেয়। এতে প্রকারান্তে নতুন প্রকল্প ঝুলে গেল। যদিও শেয়ারহোল্ডারদের অনেকেই বিষয়টির বিরোধিতা করেছিলেন। এ নিয়ে ইজিএমে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে কোম্পানির আইনি বেড়াজালে শেয়ারহোল্ডার ও বিএসইসি আটকে গেছে।
প্রথমে তারা আইপিও’র অর্থ ব্যবহারের খাত পরিবর্তন করে সিএনজি-এলপিজি চালিত থ্রি হুইলার প্লান্ট (তিন চাকার যান তৈরি) করার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন প্রকল্পের অনুমোদন নেয়ার জন্য ইজিএম করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই ইজিএমে ৪০ কোটি টাকা এফডিআর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেয়ারহোল্ডারদের প্রথমে আপত্তি থাকলেও- সেটি শেষ পর্যন্ত অনুমোদন দেয়।
সহসাই থ্রি হুইলার প্লান্ট চালু হওয়ার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। কোম্পানির সঙ্গে আলাপকালে জানতে চাইলে তারা কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি। এমনকি নতুন প্রজেক্টের স্থান পরিদর্শন করার কথা বললেও তারা রাজি হননি। পরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ইজিএমে হট্টগোলের বিষয়টিও অস্বীকার করেন। যদিও গণমাধ্যমে হট্টগোলের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, রানার অটোর একের পর এক বির্তকিত সিদ্ধান্তের কারণে বিব্রত বিএসইসি। কমিশন তথা বিএসইসি’র চেয়ারম্যান রানার অটোর আইপিও’র ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। বর্তমান কমিশন ভালো ব্র্যান্ড বা কোম্পানি আনার ব্যাপারে উদার। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে এলে ভালো ভূমিকা পালন করবে এমনটাই আশা করেছিলেন। কিন্তু কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদান ও আইপিও’র অর্থ ব্যবহারে অপারগতায় কমিশনও ক্ষুব্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে আসা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর মানসিকতার কারণে বর্তমান কমিশনের নেয়া অনেক সংস্কারমূলক কাজ ভেস্তে যাচ্ছে। বাজারের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।
সম্প্রতি বিএসইসি’র চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন কমিশনারদের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমরা খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিতে চাই। ওয়ালটন, রবির মতো কোম্পানি আবেদন করলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে অনুমোদন দেবো। কিন্তু এসে যদি ভালো পারফর্মেন্স না দেখায়- তাহলে অনুমোদন দিয়ে কি লাভ।’
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সঠিকভাবে ন্যায্য লভ্যাংশ দিতো তাহলে বাজারের মন্দাভাব থাকতো না। রানার অটো সিকিউরিটিজ আইনের সুযোগ নিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পায় রানার অটো। উত্তোলিত ১০০ কোটি টাকা গবেষণা ও উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যাংকঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোম্পানি। ব্যাংকঋণ, আইপিও খরচ বাদে অবশিষ্ট তহবিল ব্যয়ের সিদ্ধান্তটি থেকে সরে এসে সিএনজি ও এলপিজি-চালিত থ্রি হুইলার প্রগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত বর্তমান কারখানায় কোম্পানিটি বিদ্যমান টু হুইলার যানের পাশাপাশি থ্রি হুইলার উৎপাদন করবে।
নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, কোম্পানিটি চেসিস ওয়েল্ডিং লাইন স্থাপনে ১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বডি ওয়েল্ডিং লাইনে সাত কোটি ১০ লাখ টাকা, পেইন্ট বুথে ২৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ভেহিকেল অ্যাসেম্বলিং অ্যান্ড টেস্টিং ইউনিটে ১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এ প্লান্টের মাধ্যমে কোম্পানিটি মাসে তিন হাজার এবং বছরে ৩০ হাজার থ্রি হুইলার উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। আন্তর্জাতিক অংশিদারদের সম্মতিক্রমে এটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
আন্তর্জাতিক অংশিদারের সম্মতি পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, এটি একটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। তাই কিছু বলা যাবে না। নতুন প্লান্টের কার্যক্রম চলছে। তবে কতদিন লাগবে তা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। এফডিআর করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাতে টাকাটা অলস না থাকে সেজন্য এফডিআর করা হচ্ছে।
প্রজেক্ট বাস্তবায়নে টাকা লাগবে কি-না এবং প্রজেক্ট পরিদর্শন করার অনুমোদন চাইলে সিএফও বিষয়টি এড়িয়ে যান। সব বিষয় তিনি জানেন না বলেও উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ড. ফজলুল হক দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, রানার অটোর সর্বশেষ আর্থিক বছরের লভ্যাংশ খুবই হতাশাজনক। তারা চাইলে আরও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারতো। ইপিএস ৫ টাকা ০৭ পয়সা। এতে করে রানারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। আইপিও’র অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারা খুবই দুঃখজনক। বিএসইসি’র উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।

রানার অটোমোবাইলস গত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস।
কোম্পানিটি এ বছরে পুঁজিবাজার থেকে একশ’ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করার অনুমতি পায়। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় আইপিওগুলোর মধ্যে রানার অটোমোবাইলস একটি। ১০ টাকার শেয়ারে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বিডিংয়ের মাধ্যমে ৬৭ টাকা করে আইপিও’তে আসে।
গতকাল সোমবার কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ৫৬ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়। এক বছরের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দর ৫১ টাকা ২০ পয়সা।
৩০ নভেম্বর ২০১৯ অনুযায়ী, কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫০.০৪ শতাংশ পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের কাছে, ২৬.২০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এবং অবশিষ্ট ২৩.৭৬ শতাংশ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বা কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী নেই।
#
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৫৫৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged